বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক খেলাধূলা চলছে বাংলাদেশে। অনেকে আমাকে বলেন, আবার কি শুরু হয়েছে দেশে ? স্বৈরাচার চলে গেছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আমাদের কি আবার ইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে ? আমি বলেছি, চিন্তার কোনো কারণ নেই। খেলাধূলা যারা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না। তারা বিএনপির শক্তি বুঝতে পারছে না। এই বিএনপি সেই বিএনপি নই। এই বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে, এর শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। এই বিএনপিকে টলানোর সাধ্য কারও নেই। বিএনপির কয়েকটা সিদ্ধান্ত তো আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। সুতরাং এরকম সিদ্ধান্ত দিলে এ অবস্থায় যেতে হবে।
তিনি সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আলোচনা সভা, পেশাজীবি সমাবেশ ও নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিমের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সংবর্ধিত অতিথি চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাছাড়া ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ও জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর উপর নির্মিত ডকুমেন্টরী শর্টফিল্ম প্রদর্শনী করা হয়।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপিকে জোর করে ক্ষমতার বাইরে রাখার তাদের যে ভাবনা ছিল, ওই ওয়ান-ইলেভেনের বিরাজনীতিকরণ, আবার নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা, ক্ষমতার স্বাদ তো কেউ কেউ পেয়েছেন, মনে রাখছেন এ ক্ষমতা ধরে রাখলে মন্দ কী ! কিন্তু এ স্বাদ পাবার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাবার জন্য ১৬ বছর যুদ্ধ করেছে। বিএনপিকে ভাঙার সব ধরনের চেষ্টা হয়েছে। কিছু বাকি নেই, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা সব হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার চেষ্টার মধ্যেও দেশনেত্রী টলেননি, তারেক রহমান টলেননি, বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ টলেনি। সবার অবস্থান শক্ত।
তিনি বলেন, সাতই নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের অনেকটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতার যে ভাবনা, যে চিন্তা, যে আকাঙ্খা, সেটা স্বাধীনতার পরে সেদিন পূর্ণ হয়নি। বরং স্বাধীনতার পরে সেটাকে ভুলুন্ঠিত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসন, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, কালো আইন, এসবের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের লড়াই ছিল, সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্খা, মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধের যে স্যাক্রিফাইস, সেটা বাংলাদেশের মানুষ আবার নতুনভাবে পেয়েছে, নতুনভাবে গ্রহণ করেছে এবং উজ্জীবীত হয়েছে সাতই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে।
তিনি বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতনের মধ্য দিয়ে আজ যে আরেকটা বাংলাদেশের কথা চিন্তা করছি, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের চিন্তা করছি, একটা যে নতুন বাংলাদেশের চিন্তা করছি, সাতই নভেম্বরও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে একই বিষয় ছিল। স্বাধীনতার পর যে বাকশাল এবং একদলীয় স্বৈরাচার সৃষ্টি হয়েছিল, সৈনিক-জনতা সেদিন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার মধ্য দিয়ে আরেকটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছিল।
তিনি বলেন, একেকবার বাংলাদেশে স্বাধীনতা আসে, আবার সেটা হরণ হয়ে যায় স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টের মাধ্যমে। প্রতিবারই সেটা মুক্তিলাভ করেছে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে এবং এবার দেশনায়ক তারেক রহমানের মাধ্যমে। প্রতিটি মুক্তি এসেছে বিএনপির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে। এজন্য সাতই নভেম্বর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বৈরাচারের পদত্যাগ এবং তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার দিনটি আমদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার পাঁচই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার স্বৈরাচারকে বিদায়, বিএনপির নেতৃত্বে, বিএনপির অবদানের মাধ্যমে দেশকে একটি সংকটময়, একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় থেকে মুক্ত করা গেছে।
তিনি বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে আমাকে যেকথা বলতে হয়, আমরা গত ১৫-১৬ বছর ধরে সবাই কঠিন সময় অতিক্রম করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা গুমের শিকার হয়েছে, খুনের শিকার হয়েছে, বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছে পুলিশসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে। ১৬টা বছর এভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা অতিক্রম করেছে। ত্যাগ করতে শিখেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা, এ ত্যাগের মাধ্যমে তারা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আর কারও কিছু করার সুযোগ কারও নেই। আমরা অনেক কষ্ট করেছি, আমাদের অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু একটা লাভ হয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা, আমাদের এ দলটি কিন্তু ত্যাগ স্বীকার করতে শিখে গেছে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কষ্ট হলেও, সময় কঠিন হলেও এটা কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে অনেক ওপরের লেভেলে নিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও এটা আমি বলছি। তাই আজ আমাদের বুকে সাহস হয়েছে, কোনো শক্তি আমাদের টলাতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাবার আকাঙ্খায় অপেক্ষা করছে, তার ভোটাধিকার প্রয়োগের অপেক্ষা করছে, তার নির্বাচিত সংসদ, সরকার গঠনের জন্য অপেক্ষা করছে, যে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার জনগণের কাছে জবাব দেয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। অন্য কোনো সরকার দায়বদ্ধ থাকবে না। কারণ, তাদের তো জনগণের কাছে যেতে হবে না। বিএনপিকে যেতে হবে। যারা রাজনীতি করে তাদের যেতে হবে। সুতরাং জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশকে অতিস্বত্তর একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে, সরকার নির্বাচিত করতে হবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, আর যত ধরনের সংস্কারের কথা আমরা আলাপ করছি, সেটা রাজনীতিবিদরাই পূরণ করবে। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে আমরা পরিস্কারভাবে বলেছি। সংস্কারের কথা বলছেন ? দেশনেত্রী ছয় বছর আগে ভিশন টুয়েন্টি-থার্টিতে সংস্কারের কথা বলেননি ? তখন তো কারও মুখে সংস্কারের কথা শুনিনি। কারণ, দেশনেত্রী অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, আগামীদিনের বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা ছয় বছর আগে উনি উনার ভিশনের মধ্যে সেটা পরিস্কার করেছিলেন ছয় বছর আগে। দেশনায়েক তারেক রহমান সাহেব এক বছর আগে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন শেখ হাসিনারও পতন হয়নি, এত বড় বড় বিশ্লেষকদেরও আবির্ভাব হয়নি। সেই ৩১ দফায় বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যে ধরনের সংস্কারের দরকার, সবকিছু পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে। সংস্কারের জন্য আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা দায়বদ্ধ জাতির কাছে। ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি একা করেনি। ৪২টি দল, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, আমরা সবাই মিলে করেছি। অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আমরা ৩১ দফা করেছি। আমরা ৪২টা দল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জাতির কাছে এ সংস্কার করার জন্য। আপনারা কতটুকু পারবেন, কি করবেন জানি না, কিন্তু আমরা পারবো, আমরা করবো। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, এ প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র ৩১ দফা দিয়েই বিএনপি সবকিছু শেষ করেনি। তারেক রহমান সাহেব এ ৩১ দফা কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন সেটাও পরিস্কার করে দিয়েছেন। অর্থাৎ নির্বাচনের পরে জনগণ যদি আমাদের রায় দেন, তারেক রহমান সাহেব বলেছেন বিএনপি একা সরকার গঠন করবে না, বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। এ জাতীয় সরকার ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। আমরা যারা ৩১ দফা প্রস্তুত করেছিলাম, জাতীয় সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই মিলে ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করবো। সবকিছু পরিস্কারভাবে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। কিছু বাকি নেই। আবার বলছি, অন্তর্বর্তী সরকার যদি জাতীয় ঐক্যমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো সংস্কার করতে চায়, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেগুলো জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে হতে হবে। যেখানে ঐক্যমত্য হবে না, সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনের আগে মানুষের কাছে যাবে, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রস্তাব পাস করলে কোনো অসুবিধা নেই, এটাই তো নিয়ম, তারপর সংসদে সেটা পাস হবে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার করলে, সংসদে তো সেটা আবার রেটিফাই করতে হবে। সুতরাং যেটুকু করতে পারেন, আমাদের আপত্তি নেই। এর মধ্যে ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যদি দশটা সংস্কার করতে পারেন, তাহলে আমরা রাজি আছি। ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে, কথাটা কিন্তু, এর বাইরে নয়। আর বাকিগুলো জনগণের কাছে যাবে, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনী সংস্কার। সব কথা শুনছি, নির্বাচনী সংস্কারের কথা শুনছি না। একটা কমিশন গঠন করেছে, আমরা খুশি হয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে, আমরা অপেক্ষা করছি। আমরাও কিন্তু নির্বাচনী সংস্কারের জন্য সবকিছু তৈরি করে রেখেছি। আমাদের সংস্কার তো আজকের না, বাংলাদেশ আগামীদিনে কি হবে, সেটা নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে কাজ করছি, প্রত্যেকটি। ক্ষমতায় যেদিন বিএনপি বসবে, সেদিন থেকে ইনশল্লাহ সংস্কার কাজ শুরু হবে। বিচার বিভাগের সংস্কার, যেদিন থেকে বিএনপি বসবে ওইদিন থেকে শুরু হবে। একটা দিনও আমরা নষ্ট করবো না। শিক্ষাখাত, ব্যবসায়ীদের বিষয়, সব খাতের সংস্কার, সবকিছু প্রস্তুত। ডে-ওয়ান থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আর কারা কি করবে আমরা জানি না, আমরা কি করবো সেটা আমরা জানি। আগামীদিনে বিএনপি সরকার গঠন করলে, বাংলাদেশ নিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, দেশকে সেখানে নিয়ে যাবে ইনশল্লাহ। একটা কথা বলি, শেখ হাসিনা পলায়ন করার পরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই মনোজগতের যে পরিবর্তন, যে স্বপ্ন দেখছে জনগণ, রাজনীতিবিদরা যদি সেই স্বপ্ন না দেখে, তাহেলে সেই রাজনীতির কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিএনপি এটা বুঝেছে, অনুধাবন করেছে, ধারণ করেছে এবং এটা শতভাগ প্রয়োগ করে দেশের মানুষের, নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা পরিপূর্ণভাবে আগামীদের সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা সে কাজটা করবো।
আমীর খসরু বলেন, সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নির্বাচিত সরকারের দরকার। আওয়ামী লীগকে যদি আপনাকে বাতিল করতে হয় রাজনৈতিকভাবে, সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে বাতিল করা সবচেয়ে সহজ। সেই বাতিল হবে পার্মানেন্ট বাতিল। অন্য বাতিলে কাজ হবে না। আপনি অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় বাতিলে গেলে, সেই বাতিল কিন্তু সাময়িক কাজ করবে, দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে না। জনগণ যখন বাতিল করবে আওয়ামী লীগকে, সেটাই হচ্ছে আসল বাতিল। আমাদের ওদিকে যেতে হবে। সকলের অধিকার সমুন্নত রেখে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। কারণ আমরা তো অধিকারের জন্য লড়াই করেছি, অধিকারের জন্য জীবন দিয়েছি, অধিকারের জন্য জেলে গেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার আবার কারও নেই।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ একটি অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে স্বৈরাচার পালিয়েছে।। কিন্তু তার দোসররা আমাদের মাছ আছে, সমাজে আছে। এ দোসরদের যদি আমরা চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে যে মূল্যবোধ আবু সাইদ, মুগ্ধ, ইলিয়াছ আলী, চৌধুরী আলম, কোনো কিছুই আদায় হবে না। যদি দোসরদের আইনের কাঠগড়ায় না আনতে পারেন। তাদের ক্ষমতার যে দম্ভ অর্থাৎ মানুষের লুণ্ঠণকৃত টাকা, আইন-বেইনী অস্ত্র, সেগুলো যদি উদ্ধার এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে না পারে তাহলে সকল শহীদের রক্ত বৃথা যেতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন নাটক করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কোনো লজ্জা নেই পালিয়ে গেলেন, এরপরও অডিও দেন ভিডিও দেন বিভিন্ন কথা বলেন কতক্ষণ পরে বলেন স্থগিত করা হলো, অর্থাৎ নাটক চলছে। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে আওয়ামীলীগের ব্যর্থতায় জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। এমনি এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে তিনি পাক বাহীনির বিরুদ্ধে “উই রিভোল্ট” বলে বিদ্রোহ ঘোষনা করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয় আসলেই জিয়াউর রহমানের নাম আসবে। শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক। কেউ চাইলেই এই ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ ইতিহাস লিখেন ইতিহাসবিদরা। রাজনীতিবিদরা ইতিহাস রচনা করলে সেটা হয় প্রোপাগান্ডা।
এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্র জনতার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এজন্য গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের পথ আজ প্রশস্ত হয়েছে। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান পরবর্তী সময়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেশাজীবীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে কোনভাবেই নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না।
এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, ড্যাব চমেক শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দীন, সিএমইউজে সভাপতি সাংবাদিক মো. শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দীন আহমেদ মানিক, ড্যাব মহানগর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আব্বাস উদ্দীন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি এম এ সাফা চৌধুরী, ব্যাংকার মেহরাব হোসেন খান প্রমূখ।
জেএন/এমআর