ভোটের পালা শেষ। ক’দিন পরেই শপথ নেবেন নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সাংসদেরা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রত্যাশা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। জয়নিউজের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় নতুন সরকারের কাছে তাদের কী প্রত্যাশা। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রসঙ্গ।
মাহবুবুল আলম
সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
নির্বাচিত সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আলাদা রেলওয়ে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা জরুরি। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে আমি চাইব বন্দরে নতুন জেটি নির্মাণ ও চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামে পাঁচটি ব্যাংকের প্রধান অফিস চালু করা হবে বলেও আমি আশা রাখি।
সোলাইমান বাদশা
সভাপতি, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি
সুস্থ গণতন্ত্রের যদি চর্চা থাকে, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্দর অবস্থা বিরাজ করবে এবং আমরা খুব তাড়াতাড়ি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো। এখন ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতিতে ডলার সংকটের বিরাট প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এ সংকটের সমাধান চাই। পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধব সরকারেরও বিকল্প নেই। কারণ ব্যবসায়ীরা এখন বিভিন্নভাবে হয়রানির সম্মুখিন হচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হঠাৎ করে এনবিআর বা বিভিন্ন সংস্থা থেকে এসে আমাদের ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে জিজ্ঞাসবাদ করে, এত টাকার লেনদেন কেন করলেন? যা আসলে কাম্য নয়। আমরা ব্যবসা করে সরকারকে কর দিই। এ ধরনের হয়রানি তাই কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ওমর আজম
সাধারণ সম্পাদক, চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতি
আমরা ব্যবসায়ীরা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করি না। আমরা প্রত্যাশা করি সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক অবস্থা উন্নত হবে। সরকারের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে, ব্যাংক ঋণের উপর থেকে উচ্চ সুদ যেন কমানো হয়। বর্তমানে ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ীরাই হচ্ছেন ঋণগ্রস্ত। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যাংক ঋণের ওপর উচ্চহারের সুদ। ব্যবসায়ীরা এ সুদের টাকা মেটাতে গিয়েই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন। তাই আমাদের দাবি সুদের হার যেন কমানো হয়।
হাসান মুরাদ
সাধারণ সম্পাদক, খাতুনগঞ্জ মশলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি
আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসাবান্ধব সরকার চাই। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের সরকারগুলোর আমলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দলীয়করণ দেখা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমরা ব্যবসায়ীরা দলীয়করণ থেকে মুক্ত ছিলাম। আমার প্রত্যাশা থাকবে নতুন সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করে যাবে। কারণ ব্যবসায়ীরা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারলে তাদের অধীনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমদানিকৃত চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ খাদ্যদ্রব্যের ওপর আমদানি শুল্কের পরিমাণ যেন কমানো হয়। এছাড়া ব্যবসায়ীরা যেন ভ্যাট ও আয়কর সংক্রান্ত হয়রানি থেকে মুক্তি পায় এই প্রত্যাশা রাখি। দেশের উন্নয়নের জন্য ভ্যাট ও আয়কর অবশ্যই দিতে হবে। তবে ব্যবসায়ীরা যেন হয়রানিমুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আরেকটি বিষয়, ডলারের মূল্য যেন সব জায়গায় স্বাভাবিক থাকে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ডলারের মূল্য প্রত্যেক ব্যাংক যাতে অনুসরণ করে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।