বাংলাদেশে অরবিস ৭৮ লাখেরও বেশি চক্ষু পরীক্ষা করেছে

অনলাইন ডেস্ক

অরবিস ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গ্লোবাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) ক্রিস্টিন টেইলর বলেছেন, বাংলাদেশে অরবিস সম্পর্কে অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। এই চার দশকে, অরবিস শিশুদের চক্ষু চিকিৎসা, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনা সার্জারি, কর্নিয়াল রোগ এবং আই ব্যাংকিং, প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি (আরওপি), এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর স্থানীয় চিকিৎসকদের দক্ষতা ও জ্ঞান উন্নত করতে সহায়তা করেছে।

- Advertisement -

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অরবিস ৭৮ লাখেরও বেশি চক্ষু পরীক্ষা পরিচালনা করেছে, ৪৫ লাখেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের জন্য চিকিৎসা ও অপটিক্যাল সেবা প্রদান করেছে, ২ লক্ষ ৫৮ হাজারটিরও বেশি চক্ষু সার্জারিতে সহায়তা করেছে, এবং ৪০ হাজার এর বেশি মানুষকে চক্ষু চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

- Advertisement -google news follower

অদ্য ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবস্থানরত বাংলাদেশে ১১তম বার ও চট্টগ্রামে ৫ম বারের মতো আসার অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের সেমিনার কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অরবিস ৪২টি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে চক্ষু সেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারী-নেতৃত্বাধীন গ্রিন ভিশন সেন্টার যা নারীদের জন্য প্রচলিত বাধাগুলো দূর করে সেবার সুযোগ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, অরবিস ১৭টি মাধ্যমিক (সেকেন্ডারি) হাসপাতাল, ৪টি তৃতীয় পর্যায়ের (টার্শিয়ারি) হাসপাতাল, ৪ টি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার, এবং ২ টি ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা উন্নত করতে সহায়তা করেছে।

- Advertisement -islamibank

অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী পরিচালক (গ্লোবাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) জেনা মন্টগোমারি বলেন, অরবিস বাংলাদেশের ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করতে অংশীদার হয়েছে অরবিস। এই রোগটি শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। ২০০০ সালে, অরবিস বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী প্রোগ্রাম চালু করে এবং স্থানীয় চক্ষু হাসপাতাল ও এনজিওদের সাথে মিলে চক্ষু রোগ প্রতিরোধ ও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে, যা দূরবর্তী এলাকায় যেমন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং সিলেটের নারী চা শ্রমিকদের মধ্যেও পৌঁছে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ফেডেক্স অরবিসের মিশনে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সহায়তা প্রদান করছে এবং ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান ও পণ্যসামগ্রী পরিবহনের মাধ্যমে অবদান রেখেছে। ২০২১ সালে, ফেডেক্স তাদের দৃষ্টি সুরক্ষা মিশনে অরবিসের প্রতি নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে, যেখানে তারা ৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেয়। এই অনুদান অরবিসের ফ্লাইং আই হসপিটাল এবং এর প্রকল্পগুলির জন্য আর্থিক, লজিস্টিক এবং অপারেশনাল সহায়তা প্রদান করবে আগামী পাঁচ বছরে।এছাড়াও, ফেডেক্স বিমানযন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং পাইলট প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে।

তিনি বলেন, ফ্লাইং আই হসপিটালটি পরিচালনা করে ফেডেক্স পাইলটরা, যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সময় দান করে এবং সারা বিশ্বে অরবিস প্রকল্পে বিমানটি পরিচালনা করে নিয়ে যান। “ফ্লাইং আই হসপিটাল উদ্ভাবন এবং সহানুভূতির এক অসাধারণ উদাহরণ। এটি এমন একটি সম্পদ যা বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী কোণগুলিতে আশার আলো ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিচ্ছে, বলেছেন ফেডেক্স এর ফ্লাইট অপারেশনস এবং এয়ারলাইন প্ল্যানিং এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ব্রাউনলি। তিনি আরও বলেন, “আমাদের ফেডেক্স পাইলট, যান্ত্রিক বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত, যারা অরবিসের মিশনকে সমর্থন করছে। তাদের নিবেদন এবং দক্ষতা ফ্লাইং আই হসপিটাল প্রোগ্রামের সফলতায় অপরিহার্য”।

অরবিস একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা, যা দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে। অরবিস বিশ্বজুড়ে ২০০ টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করছে যাতে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ উন্নতি করতে পারে। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এমন অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের শিকার যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শক্তিশালী ও টেকসই চক্ষু সেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এবং অ্যালকন কেয়ারস, অ্যালকন ফাউন্ডেশন ও ফেডেক্স-এর সহায়তায়, অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটাল চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহব্যাপী চক্ষু প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুরু করেছে।বাংলাদেশে চক্ষু সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এটি অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের একাদশ অবতরণ। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই প্রশিক্ষণ প্রকল্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ফ্লাইং আই হসপিটাল এবং অরবিসের পার্টনার হাসপাতাল চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি এবং ট্রেনিং কমপ্লেক্স (সিইআইটিসি) তে অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাটারাক্ট, অকুলোপ্লাস্টিকস, সার্জিক্যাল রেটিনা, শিশু গ্লুকোমা এবং কর্নিয়ার মতো চক্ষু রোগের চিকিৎসা। এছাড়াও রয়েছে অ্যানেস্থেশিওলজি, নার্সিং এবং বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রশিক্ষণ। ১৭ নভেম্বর থেকে এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের জন্য অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের ভেতরে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, যা বিশ্বের একমাত্র সম্পূর্ণ স্বীকৃত বিমানভিত্তিক চক্ষু শিক্ষাদান হসপিটাল। অরবিসের ক্লিনিক্যাল স্টাফ এবং স্বেচ্ছাসেবক বিশেষজ্ঞগণ (ভলান্টিয়ার ফ্যাকাল্টি) সারা দেশ থেকে আগত চক্ষু বিশেষজ্ঞদের হাতে-কলমে সার্জারি ও রোগী সেবা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, এর পাশাপাশি সিমুলেশন প্রশিক্ষণ ও চক্ষু কর্মশালার আয়োজনও করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্থানীয় চক্ষু সেবাদাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এবং অ্যালকন ফাউন্ডেশন ও ফেডেক্স-এর সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও অ্যালকন কেয়ারস, অফথালমোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওএসবি), বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) এবং ন্যাশনাল আই কেয়ার এই প্রকল্পে সহায়তা করছে। অ্যালকন এবং অরবিসের চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অংশীদারিত্ব রয়েছে, যেখানে তারা অ্যালকন কেয়ারস এর মাধ্যমে সরঞ্জাম দান ও অ্যালকন ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে অর্থায়ন করে থাকে। এছাড়াও অ্যালকন এর বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশিক্ষকরা অরবিস প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে, যেখানে তারা চক্ষু সেবা প্রযুক্তি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। অ্যালকন সর্বশেষ ২০২৩ সালে মঙ্গোলিয়ায় ফ্লাইং আই হসপিটাল প্রকল্পেও সহায়তা করেছে।

অরবিস আফ্রিকা, এশিয়া, ক্যারিবিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কর্মসূচি পরিচালনা করে; উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিকাশ করে, যার মধ্যে রয়েছে পুরস্কারপ্রাপ্ত টেলিমেডিসিন এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম সাইবারসাইট। অরবিস বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল (ঋষুরহম ঊুব ঐড়ংঢ়রঃধষ) পরিচালনা করে, যা একটি এমডি-১০ বিমানের উপর সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃত চক্ষু শিক্ষার হাসপাতাল হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত। গত ১১ বছর ধরে, অরবিস চ্যারিটি নেভিগেটর -এর চার-তারকা রেটিং পেয়েছে, যা শক্তিশালী আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি এবং স্বচ্ছতার প্রতি অরবিসের প্রতিশ্রুতির নিদর্শন এবং এটি অরবিসকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩% দাতব্য সংস্থার মধ্যে স্থান দিয়েছে। গত তিন বছরে অরবিস গাইডস্টার-এর প্লাটিনাম স্বচ্ছতার স্মারক অর্জন করেছে। ২০২২ সাল থেকে অরবিস বেটার বিজনেস ব্যুরো থেকে “স্বীকৃত দাতব্য সংস্থা”র মর্যাদা পেয়েছে, যা দাতব্য সংস্থার জন্য ২০টি মানদণ্ড পূরণ করার স্বীকৃতি দেয়। অ্যালকন বিশ্বজুড়ে ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যের সাথে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা এবং মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। অ্যালকনের সার্জিকাল এবং ভিশন কেয়ার পণ্যগুলি প্রতি বছর ২৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে, যারা ছানি, গ্লুকোমা, রেটিনাল রোগ এবং অপটিক্যাল ত্রুটির মতো রোগের সাথে বসবাস করছেন। ১৪০টিরও বেশি দেশে অ্যালকন কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২৫,০০০ এর বেশি সহযোগী নিয়ে অ্যালকন উদ্ভাবনী পণ্য, চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সাথে অংশীদারিত্ব এবং উন্নত মানের চক্ষু সেবার প্রাপ্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। ফেডেক্স এক্সপ্রেস কর্পোরেশন সম্পর্কে ফেডেক্স এক্সপ্রেস কর্পোরেশন বিশ্বের বৃহত্তম এক্সপ্রেস পরিবহন সংস্থাগুলির মধ্যে একটি, যা ২২০টিরও বেশি দেশে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি প্রদান করে। ফেডেক্স বিমান এবং স্থল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংবেদনশীল পণ্য দ্রুত সরবরাহ করে।

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM