চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নিজামপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফ্য় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার পর আতঙ্কে নিজামপুর বাজারের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৪ জনের জখম গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে একজন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা আরমান হোসেন (২০), মোহাম্মদ সুমন (৩৪), এমরান হোসেন (২২), মফিজুল ইসলাম (৩৪), শহীদুল্লাহ খানসাব (৬০), রাসেল (৩০), যুবদল কর্মী ইমন (২১), ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নজরুল ইসলাম (৩৮), যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন (৩৫), ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাসান ইমাম (৪৫), ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক বেলাল হোসেন (২৬), সদস্য টিটু (৩৫) ও ছাত্রদল নেতা নাহিদ রায়হান চৌধুরী হিমেল (২০)।
সংঘর্ষের ঘটনার পর পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিজামপুর বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, নিজামপুর বাজারে সরকার বাড়ির প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল থেকেই মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারীদের সঙ্গে স্থানীয় ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিমের অনুসারী নেতাকর্মীদের ঝামেলা শুরু হয়। শুক্রবারে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত। একটি ধারায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন গ্রুপের সাথে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।
আরেক পক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন (চেয়ারম্যান) গ্রুপের সাথে রাজনীতির নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিনসহ অন্যান্যারা।
সংঘর্ষের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ ও তার পরিবারের মহিলা সদস্যদের গায়ে তারা হাত তুলেছে। দলীয় বিশৃঙ্খলা যারা করেছে দলের রীতি অনুযায়ী তদন্ত করে তাদের বিচার হওয়া উচিত।’
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি নেতা স্বপনের ব্যক্তিগত দ্বন্ধের কারণে এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তাঁর নেতৃত্বে ফরফরিয়া গ্রামের শামলাসি বাড়িতে ঘরে ঢুকে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কুপিয়েছে। মহিলাদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরমান নামে এক যুবদল কর্মীর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় এবং ছেলেকে বাঁচাতে আসলে বাবা খানসাবকেও মারধর করে। আরমানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিবিড় পর্যবেক্ষন কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। মূলত স্বপন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, বিএনপির গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। নিজামপুর এলাকায় ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে। আহত সবাইকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের বলেন, দলীয় কোন্দলকে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহতবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া একই ঘটনায় আরও অনেকে আহত হওয়ার খবর শুনেছি।
অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
জেএন/পিআর