বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও নতুন খাল খননে যাচ্ছে চসিক

দেশের সর্বাধুনিক বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খননের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে এই প্রকল্প দুটির কাজ।

- Advertisement -

চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরের কুলগাঁও বালুছড়ায় ১৬ একর জায়গার উপর প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সর্বাধুনিক বাস-ট্রাক টার্মিনালের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

- Advertisement -google news follower

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হলে নগরের যানজট সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে। বর্তমানে নগরে কোনো নিদিষ্ট বাস টার্মিনাল নেই। ফলে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে নগরে বসবাসকারী নাগরিকদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। তাই চট্টগ্রাম নগরকে যানজটমুক্ত রাখতে কুলগাঁও এলাকায় এই বাস-ট্রাক টার্মিনালের উদ্যোগ নিয়েছে চসিক।

চসিক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা, জমির উন্নয়ন বাবদ ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, বাস-ট্রাক টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ইয়ার্ড নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।

- Advertisement -islamibank

প্রথম ধাপে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আনুষাঙ্গিক কাজ। সর্বশেষ বহুতল বাণিজ্যিক ভবণ নির্মাণ করা হবে। এই টার্মিনাল নির্মাণের জায়গার মধ্যে সিডিএ মালিকানাধীন রয়েছে আট একর। বাকি আট একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে।

বাস টার্মিনালটি থেকে দূরপাল্লার এবং আন্তঃনগর উভয় ধরনের বাস ছেড়ে যাবে। টার্মিনালের মুখে থাকবে চারতলা বিশিষ্ট নান্দনিক ভবন। এই ভবনে যে সব সুযোগ সুবিধা থাকবে তারমধ্যে প্রথম তলায় সিটি বাস টার্মিনাল, আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল, ১টি যাত্রী নামার লেইন, ২৫টি যাত্রী উঠার লেইন, ১৪টি অতিরিক্ত নামার-অপেক্ষমান লেইন থাকবে। ছাদযুক্ত বৃহদাকার খোলা হলরুম এবং তথ্য কেন্দ্র, ৩টি স্থানে ৫টি লিফট, ১টি জোড়া চলন্ত সিঁড়ি ও ৩টি প্রশস্ত সিঁড়ি থাকছে। প্রতিটি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক বৃহদাকার ওয়াস রুম (টয়লেট), ২২টি টিকেট কাউন্টার, ওয়াইফাই সুবিধাসহ যাত্রীদের বসার জায়গা, লাগেজ রুম, ট্যাক্সি বুকিং বুথ, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, ২য় তলায় রেঁস্তোরা, এসি বাসের যাত্রীদের বসার জায়গা, ৩য় তলায় বাস কোম্পানীগুলোর ব্যবসায়িক অফিস, টার্মিনাল ফেসেলিটিজ এবং ৪র্থ তলায় বাস কোম্পানীগুলোর ব্যবসায়িক অফিস, প্যানোরোমা রেস্টুরেন্ট থাকবে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩০টি কার এবং ট্যাক্সি পার্কিং, ৬টি পেট্রোলপাম্প, ৬৯টি বাস ডিপো, ১৭টি ওয়ার্কসপ এবং সার্ভিসিং সেন্টার, ৪টি সার্ভিসিং লাইন, ৮টি রক্ষণাবেক্ষণ ওয়ার্কসপ লেইন, বাস কর্মচারীদের কমনরুম, ওয়াসরুমসহ থাকার ব্যবস্থা, সাব স্টেশন এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টেশন থাকছে। এ বাস-ট্রাক টার্মিনালটি নির্মিত হলে উত্তর চট্টগ্রামের যানবাহনগুলোকে আর নগরে ঢুকতে হবে না।

চসিক সূত্রে আরো জানা যায়, বহুপ্রতীক্ষিত বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র। এই নতুন খাল খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকের সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী নতুন খালটি নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়ার চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলিরহাটের পাশে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত হবে ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে খালের উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে এবং নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হওয়ার ফলে জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে।

প্রকল্প দুটি নিয়ে সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে চসিক কনফারেন্স হলে চসিক প্রকৌশলীদের সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সভায় টার্মিনাল এরিয়া মার্কিং, ভূমি অধিগ্রহণ ও অধিগ্রহণের নোটিশসহ যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সিটি মেয়র সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

মেয়র জয়নিউজকে বলেন, যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিকল্পনা থাকা বাঞ্চনীয়। কাজের গুণগত মান অক্ষুন্ন আছে কি-না তা সার্বক্ষনিক তদারকি করার দায়িত্ব প্রকৌশলীদের। তাই প্রতিটি কাজে নির্বাহী প্রকৌশলীকে মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত থেকে তদারকি করার পরামর্শ দেন মেয়র। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মেয়র আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চলমান প্রকল্প কোনটি কোন পর্যায়ে আছে, তার একটি ফিরিস্তি দেওয়ার জন্য চসিকের প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন।

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু ছালেহ, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ইসলাম, মনিরুল হুদাসহ নির্বাহী প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।

জয়নিউজ/বিশু/জুলফিকার

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM