বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক চলল ট্রেন

অনলাইন ডেস্ক

যমুনা নদীর বুকে নবনির্মিত দেশের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলক চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণগতি পেতে আরও সময় লাগবে।

- Advertisement -

প্রকল্প পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় একইসঙ্গে নদীর সিরাজগঞ্জ প্রান্ত থেকে একটি ও টাঙ্গাইল প্রান্ত থেকে একটি ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করেন প্রকৌশলীরা। প্রথমে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার পরে ২০ কিলোমিটার ও শেষে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলানো হয় সেতু দিয়ে। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সময় কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি পাওয়া যায়নি। এ সময় প্রকল্পের দেশি ও জাপানি প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।

- Advertisement -google news follower

বুধবারও বিভিন্ন গতিতে সেতু দিয়ে ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক মাসুদুর রহমান।

এদিকে ট্রেনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধন উপলক্ষে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই পাড়ের মানুষের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

- Advertisement -islamibank

ট্রায়াল ট্রেনের চালক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম ট্রেনটি আমি চালাব। ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’

নির্মাণাধীন রেল সেতুটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বা শেষের দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও এ বছর তা হচ্ছে না। তবে আগামী ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের পর দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত সোমবার থেকে ট্রায়াল ট্রেন শুরু হলেও মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে উদ্বোধনী ট্রায়াল ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চলবে।

দেশের এই দীর্ঘতম রেল সেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে সেতু পার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বাঁচবে।

রেল সেতু রেলওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন যমুনা রেল সেতু সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের প্রথম বছরে সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এতে ক্রসিংয়ের সমস্যা হবে না, ফলে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়, যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়ন এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন সেতু পারাপার হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়।

মোট ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু। মোট ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে এই সেতুটি।

জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেল সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM