চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব প্রান্তের রেল যোগাযোগের অন্যতম মধ্যবর্তী স্থান কুমিল্লা। দেশের উচ্চ গতির এই রেলপথে গলার কাঁটা অবৈধ রেলক্রসিং বা লেভেল ক্রসিং। এসব অবৈধ রেলক্রসিংয়ের একটি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল-কালিকাপুর রেলক্রসিং। এই ক্রসিংটি শতবছর আগের বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঝুঁকিপূর্ণ ওই রেলক্রসিংটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এবং শত শত যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই রেলক্রসিংটি বৈধ করে সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি এতদিনেও। ফলে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির আশঙ্কা থাকছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার সব মানুষের উপজেলা সদরে যাওয়ার অন্যতম পথে পরিণত হয়েছে এই অবৈধ রেলক্রসিংটি। অনেক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে রেললাইনের দুই পাশে মাটি ফেলে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অরক্ষিত, অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৬১টি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্রসিংই অবৈধ। এসব অবৈধ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটিতে গেটম্যান দেওয়া হলেও বাকিগুলো অরক্ষিতই রয়ে গেছে। গত তিন বছরে এসব ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় বাকশীমূল গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, আমার বয়স ৫২ বছর। আমাদের পূর্ব পুরুষদের যাতায়াতের পথও ছিল এটি। এটি শতবছরেরও পুরনো পথ। কিন্তু এতদিনেও এখানে কোনো গেটম্যান দেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি দুঃখজনক। গেটম্যান থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না।
হুমায়ূন কবির নামের এক বাসিন্দা বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির ফলে ৬টি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। তারা একটু সচেতন হলে, গেটম্যান ও ব্যারিয়ার তৈরি করে দিলে এখানে অন্তত প্রাণহানি হতো না।
স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেললাইনের দুইপাশে প্রচুর উঁচু উঁচু গাছপালা রয়েছে। স্থানীয়রা এগুলোকে একাশি গাছ বলে ডাকেন। ঘন গাছপালার জন্য দূর থেকে ট্রেন দেখা যায় না। আজকের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। চালক দুই পাশে ভালো করে তাকিয়েও ট্রেনটি দেখতে পাননি।
লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান হোসেন বলেন, ওই রেলক্রসিংটি অবৈধ। তাই সেখানে কোনো গেটম্যান নেই।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (পথ) মো. লিয়াকত আলী বলেন, দুর্ঘটনার ওই জায়গাটি এলজিইডির। এলজিইডি উদ্যোগ নিলে রেলক্রসিংটি বৈধ করা যেত। আমরা আজকে সেখানে সতর্কতার সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। সেখানে গেটম্যান এবং ব্যারিয়ার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কুমিল্লা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফ জামিল বলেন, জায়গাটি এলজিইডির ঠিক আছে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান বা ব্যারিয়ার তৈরি করার দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। কিছুদিন আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষসহ আমরা যৌথভাবে অবৈধ রেলক্রসিংগুলো পরিদর্শন করেছি। একটা সার্ভে করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়ানোর জন্য এলজিইডির ওপর দোষ চাপালে তো হবে না।
প্রসঙ্গত, যাত্রীবাহী একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় সুবর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের কালিকাপুর রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জেএন/এমআর