জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সরাসরি কোন দলের পক্ষ না নিলেও ব্যতিক্রম প্রতিবেশী ভারতের পত্রিকাগুলো। ভারতের নির্বাচনে সে দেশের গণমাধ্যমকে, বিশেষ করে সংবাদপত্রকে সম্পাদকীয় নীতি, বিজ্ঞাপন এবং সংবাদ ব্যবস্থাপনায় সরাসরি অবস্থান নিতে দেখা যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার অন্যতম শীর্ষ দৈনিক ও মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল সরকার ঘেঁষা পত্রিকা সংবাদ প্রতিদিন বুধবার, দোসরা জানুয়ারি সরাসরি বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকার ইস্যুতে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জয়নিউজের সহ-সম্পাাদক শহীদুল ইসলাম’র বিশেষ বিশ্লেষণ পড়ুন-
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষায় অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা সংবাদ প্রতিদিন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত এই বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র ১৯৯২ সাল থেকে প্রকাশ হয়ে আসছে। পত্রিকাটির সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু, যিনি মমতা ব্যানার্জির রাজ্যসভার সাবেক সংসদ সদস্য। সংবাদ প্রতিদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সম্পাদকীয় ‘হাসিনার দায়’ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দু’বছর আগেই নির্বাচনি নেটওয়ার্ক সাজিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই প্রশাসন কতটা উন্নয়ন-সহায়ক, প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ প্রতিদিনের সম্পাদকীয়তে আরো ফুটে উঠেছে সময় উপযোগী বক্তব্য। তারা লিখছে- ‘দেশবাসী ফের তাঁর কথায় আস্থা রেখে উন্নয়ন ও শান্তির সপক্ষে বিপুল হারে সমর্থন দিয়েছেন। সচিত্র পরিচয়পত্র হাতে ভোটের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মতামত দিয়েছেন ভোটাররা। ফলপ্রকাশে দেখা গিয়েছে, তাঁর জোট সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পেয়েছে। একা তাঁর নিজের দল ‘আওয়ামী লীগ’ পেয়েছে ২৬৭ আসন। এহেন সমর্থন নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই চতুর্থবারের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা’।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এই বিপুল জয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের কাঁধে বড় দায়িত্বও অর্পিত হয়েছে। তাদের এই সম্পাদকীয় ভাষ্য সত্য।
তারা লিখেছে- ‘’ভোটে ‘বিএনপি‘ জোটের প্রার্থী ও কর্মীদের প্রচারেই শাসক দল নামতে দেয়নি বলে অভিযোগ। বুথ দখল, রিগিং, ছাপ্পাভোট থেকে শুরু করে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন বিএনপি জোটের নেতা কামাল হোসেন। কিন্তু বিদেশি নির্বাচনি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম কেউই এমন বুথ দখল বা রিগিংয়ের ছবি দেখাতে পারেনি’’।
দেশের ভোটের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তারা সম্পাদকীয়তে আরো লিখেছে- ‘’আওয়ামী লীগের পাল্টা দাবি, দেশের অর্ধেক নির্বাচনি বুথে এজেন্ট দেওয়ার মতো সাংগঠনিক পরিকাঠামো নেই বিরোধীদের। ঢাকা শহরে বসে দৈনিক নানা সংবাদমাধ্যমে ‘তোপে দেগে’ গিয়েছেন বিএনপির নেতারা। সারাবছর শুধুমাত্র নেত্রী খালেদা ও তাঁর পলাতক পুত্র যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজা প্রাপ্ত তারেক রহমানের মুক্তি নিয়েই সরব ছিলেন। সাধারণ মানুষদের সমস্যঅ, জনজীবনের সংকট সুরহার কোনো বিষয় নিয়ে গণআন্দোলন করেনি বিরোধীরা। স্বভাতই সাধারণ মানুষ দেখেছে বিরোধীরা শুধুমাত্র দুর্নীতি ও দেশদ্রোহী মামলায় দোষী সাব্যস্ত দুই নেতা-নেত্রীর মুক্তি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থেকেছেন। উল্টোদিকে, সেই সময় দেশের গরীব মানুষদের নানা পরিসেবা দিতে প্রকল্প চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের নির্বাচনে বিএনপির সাথে জামাতের ঐক্য অটুট থাকা নিয়ে আগে থেকেই গোস্বা ভারতের রাজনৈতিক মহল। তারা সম্পাদকীয়তে লিখেছে- ‘‘এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে মৌলবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি নির্ভর জামায়াতের ক্ষমতায় ফেরার মতো একটা বড় ভয় কাজ করছিল। কিন্তু আধুনিক ইউরোপীয় কালচারে অভ্যস্ত এবং খোলামেলা জীবনশৈলিতে ডুবে থাকা নারীরাও আর জামায়াতের ফতোয়া মেনে পরদার আড়ালে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না’’।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুবই স্নেহভাজন সৃঞ্জয় বসু সংবাদ প্রতিদিনের সম্পাদক। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ‘টুম্পাই’ বলে সম্বোধন করেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কাভার করতে বিশেষ প্রতিনিধিকেও বাংলাদেশ পাঠিয়েছে সংবাদ প্রতিদিন। এমনকি হাসিনাকে ফোন করে অভিনন্দন জানাতেও পিছিয়ে ছিলেন না মমতা। সেই মমতার স্নেহধন্য পত্রিকার সম্পাদকীয় শেষে উঠে এসেছে বিরাট এক প্রত্যাশা- ‘আগামী পাঁচ বছরে ‘উন্নয়ন’ সামলে কিভাবে পার্টিসর্বস্ব শেখ হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত করেন, সেটা দেখতে আগ্রহী গোটা বিশ্ব’।