ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণ যাতে ঘরে বসে ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গ্রহণ করতে পারে সে প্রত্যয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় নতুন প্রয়াস গ্রহণ করেছে। কোন ধরণের হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতি ছাড়াই আগের চেয়ে আরও আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী ভূমিসেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে দেশে নতুন অর্ন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। পূর্বের অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনায় বর্তমান সরকার প্রত্যেক সেক্টরে নতুন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় হয়রানি রোধে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমিসেবায় নতুনভাবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। ভূমি উন্নয়ন কর, মিউটেশন, পর্চা বা খতিয়ান ও নকশা এগুলো জনগণের কাছে চাহিদা রয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর শুধু সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করেনা, যারা ভূমি উন্নয়ন কর দেন তারা একটা দাখিলা পান এবং এটি মালিকানার জন্য প্রয়োজন।
আজ ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত ভূমি ব্যবস্থাপনা সংস্কার বিষয়ক স্টেকহোল্ডার কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সহযোগিতায় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এএলএএমএস) কনফারেন্সের আয়োজন করেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, পূর্বে ভূমি সংক্রান্তে জনগণের কাঙ্খিত সেবা তেমন নিশ্চিত হয়নি। ভূমি জঠিলতা নিরসনে প্রত্যেকটি জমির সঠিক জরিপ ও সার্ভে প্রয়োজন। এ জন্য সারাদেশব্যাপী জিজিটাইজড জরীপ সম্পন্ন করতে পারলে জমির মূল মালিকানা শতভাগ নির্ভূল হবে। এ লক্ষ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে আধুনিক পদ্ধতিতে কাজ করছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্পে ৬২টি মৌজা রয়েছে। পাইলটিং প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো জিজিটালাইজড করতে পারলে জনগণ উপকৃত হবে। নিজস্ব মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইনে আবেদন পরবর্তী জমির মিউটেশন হলেই ভূূমি মালিক ঘরে বসেই পর্চা বা খতিয়ান সংগ্রহের পাশাপাশি অনলাইনে ভূমি কর পরিশোধ করতে পারবে, এর জন্য আর ভূমি অফিসে যেতে হবেনা। ভূমি সংক্রান্তে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহঃ মনিরুজ্জামান (গ্রেড-১) বলেন, ভূমিসেবা আরও সহজীকরণে সর্বস্তরের জনগণনকে অবহিত করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর যৌথভাবে সংস্কার কাজ শুরু করেছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এখন থেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণ ঘরে বসেই হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াই অ্যাপসের মাধ্যমে ১৪টি ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়সহ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর দেশব্যাপী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্লট টু প্লট সার্ভের মাধ্যমে ম্যাপ তৈরী করে প্রকৃত মালিকের নামে জমির খতিয়ান তৈরী করা আমাদের মূল লক্ষ্য। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর ইন্টারনেট এক্সেস থাকলে ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ঘরে বসেই দেখতে পারবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের নবাগত বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়া উদ্দীন বলেন, কোন ধরণের হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতি ছাড়াই জনগণের কাঙ্খিত ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। ভূমিসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে বিষয়ে নজরদারী বৃদ্ধি করা হবে। দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরকে স্বচ্চতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের নবাগত বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহঃ মনিরুজ্জামান (গ্রেড-১)। ভূমি ব্যবস্থাপনায় সংস্কার বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী ও যুগ্ম সচিব জাহিদ হোসেন পনির। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমজাদ হোসেন, উপসচিব সেলিম আহমেদ, উপসচিব এ.টি.এম আজহারুল ইসলাম, সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব) মোঃ আবু হারিস মিয়া, ইডিএলএমএস প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক-২ মাসুদুর রহমান মোল্লা, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ.এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, দৈনিক কর্ণফুলী সম্পাদক জামায়াত নেতা আফসার উদ্দিন চৌধুরী, বিএনপি নেতা মোঃ ইদ্রিছ, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ কাশেম চৌধুরী, ছাত্র সমন্বয়ক রাসেল আহমদ প্রমূখ।
বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডারগণ কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন।
জেএন/এমআর