শিশুদের আনন্দময় শৈশব উপহার দিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক গড়তে চান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বুধবার দুইটি মাঠের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ওয়ার্ডেও খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক গড়তে চান মেয়র। এদিন মহেশখালকে ঘিরেও একটি সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
বুধবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়া প্রকল্পগুলো হল ২ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৮৭৭ টাকা ব্যয়ে ২৬ নং ওয়ার্ডস্থ মহেশখালের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প, ৩ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৭ টাকা ব্যয়ে ০৯ নং ওয়ার্ডস্থ ফিরোজশাহ মাঠের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এবং ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে ১১ নং ওয়ার্ডস্থ বহুরূপী মাঠের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প।
উদ্বোধনকালে মেয়র ডা. শাহাদাত তার বক্তব্যে বলেন, আমার ইচ্ছা নগরীর ৪১ টি ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ, ওয়াকিং স্পেস ও শিশুপার্ক গড়ে তুলব। ফিরোজশাহ ও বহুরূপী মাঠ উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা যুবসমাজকে শরীর চর্চার সুযোগ দিতে চাই, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। “আমি চসিকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছি নাগরিকদের সুস্থ বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধিতে। এছাড়া অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর সাথেও ভূমি বরাদ্দের জন্য যোগাযোগ করেছি। আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, জিয়া শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি বিপ্লব উদ্যানে একটা স্ট্রাকচার করা হচ্ছিল সেটি ভেঙে গ্রীন পার্ক করার উদ্যেগ নিয়েছি। কারণ আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকার নিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ গড়ে উঠার কারণে অস্বচ্ছল ঘরের ছেলেরা খেলতে পারছে না। এ কারণে আমার ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা। শিশুদের খেলার মাঠে ফিরাতে পারলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং কমে আসবে।
মেয়র বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো চট্টগ্রামকে একটি গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা। মহেশখালের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে খালের পাড়ে গ্রীন ভিউ এবং ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে, যাতে নাগরিকরা এই এলাকায় বিনোদনের সুযোগ পান। এই উদ্যোগ নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। পাহাড় ও সমুদ্রের রাজ্য হয়েও এখানে বিনোদনের সুযোগ সীমিত। আমরা চাই, পার্ক এবং মাঠ বৃদ্ধি পেয়ে নাগরিকরা একটি আধুনিক এবং সুখী জীবনের স্বাদ পাবে। এটি শুধু উন্নয়ন নয়, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারও।”
তিনি আরো যোগ করেন, “চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এই সমস্যার মূল কারণ হলো খাল পরিষ্কার না থাকা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন। আমরা খালগুলোর গভীরতা বাড়ানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছি। এছাড়া, সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে খাল খননের কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে হবে।”
তিনি মশক নিধন কার্যক্রম এবং পরিচ্ছন্নতা উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জনগণকে সজাগ থেকে পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের কর্মীদের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে এবং জনগণের সাথে মিলেমিশে কাজ করছি।”
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, “নগর সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি সিটি গভর্নমেন্টের অধীনে সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করলে পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব। আমরা চাই নাগরিকদের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করে একটি আধুনিক ও টেকসই চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে।”
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহান, মাহমুদ শাফকাত আমিন,সহকারী প্রকৌশলী সজীব রেজা হক, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ) সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
জেএন/এমআর