সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুই ধাপে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার এই পরিকল্পনা হতে পারে।
অবসরে গিয়ে পেনশন ভোগরত কর্মকর্তা-কমর্চারীরাও পাবেন এই সুবিধা। পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সবাই এই সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের জন্য একটু কম এবং কর্মচারীদের জন্য একটু বেশি দেওয়া হতে পারে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ আমলে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদমর্যাদা এবং আর্থিক সুবিধা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। এর আগে পদবঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন জনপ্রশাসন সচিব।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সময়ে ভোট চুরিতে জড়িত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দুই ধাপে মহার্ঘ ভাতা সুবিধা পাবেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি সাময়িক সামাল দেওয়ার জন্য যে বিশেষ ভাতা দেওয়া হয়, তাকে মহার্ঘ ভাতা বলা হয়।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘কমিটি সামনের সপ্তাহে প্রথম সভা করবে। চেষ্টা থাকবে সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সরকারকে সুপারিশ করার।
সুপারিশ দিলে বাস্তবায়ন করবে সরকার। কত শতাংশ দেওয়া হবে, সেটি এই কমিটি সুপারিশ করবে। সুপারিশ কতটুকু রাখা হবে, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
এ ক্ষেত্রে কিছুদিন আগে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দেওয়ার সুপারিশের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তোপের মুখে সচিব: এদিকে, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে মোখলেস উর রহমানের কক্ষের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ আমলে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তাদের অনেকেই মেঝেতে বসে যান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচিব তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দপ্তরের বাইরে বের হলে তাদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা উচ্চঃস্বরে সচিবের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। কেউ কেউ জনপ্রশাসন সচিবকে পদত্যাগ করতেও বলেন। এক পর্যায়ে সচিব নিজের দপ্তরে ঢুকে পড়েন।
পরে তিনি বলেন, বঞ্চিত ৭৬৪ জনকেই তাদের ‘পদমর্যাদা’ দেওয়া হবে। তবে সেটা পদোন্নতি নয়। এ ব্যাপারে কিছুটা সময় লাগবে।
তিনি বলেন, পদমর্যাদা দিয়ে জিও জারি করা হবে, আর এই হিসাবটা করবে এজি অফিস। তাদের সায়েন্টিফিক নিয়ম আছে। এরপর হবে ফিন্যান্সিয়াল জিও।
সর্বশেষ যে বেনিফিট হবে, তিনি শেষ কোন সিলিংয়ে গেলেন, ঐদিন থেকে ঐ তারিখ থেকে তার পেনশন বেনিফিটটাও ঐভাবে হবে। মূল বেনিফিটটা তার পেনশনে হবে সারা জীবন।
গত ১০ ডিসেম্বর পদোন্নতিবঞ্চিত অবসপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন পেশ করে। কমিটির প্রধান ও সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান কমিটির অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন।
কমিটি সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিব মর্যাদা) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্মসচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে চারজন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশে উল্লেখ করে।
ভোট চুরির বিচার চায় বিএনপি: আওয়ামী লীগের সময়ে ভোট চুরিতে জড়িত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপির পক্ষ থেকে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি জানান, বিএনপি প্রশাসনে দলীয় নয়, নিরপেক্ষ লোক চায়। প্রতিনিধিদল বিএনপির জনপ্রশাসন সংস্কার প্রস্তাব জনপ্রশাসন সচিবের কাছে হস্তান্তর করে।
সুপারিশে বিগত তিন নির্বাচনে ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের কর্মীদের আইনের আওতায় আনা, প্রতি নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী দোসরদের দ্রুত বিতাড়িত করার সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা জানান ইসমাইল জবিউল্লাহ।
জেএন/পিআর