চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন যে, গার্মেন্টস ও রেমিটেন্সই দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড। প্রবাসী কর্তৃক প্রেরিত রেমিটেন্স দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম পন্থা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দিন দিন দেশের অর্থনীতিকে আরো অধিকতর শক্তিশালী করছে। তাই দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে প্রবাসীদের ভ‚মিকা অপরিসীম। দেশে ও বিদেশে কোন প্রবাসী যাতে কোন রকম হয়রানির শিকার না হন, কিভাবে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সর্তক থাকতে হবে।
আজ ১৮ ডিসেম্বর বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে নগরীর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস আয়োজিত আলোচনা সভা ও চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী মেধাবী সন্তানের হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান, জেলার সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ও সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে নগরীর আগ্রাবাদস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সংলগ্ন মাঠে ১৫টি স্টলের মাধ্যমে দিনব্যাপী জব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও জাতীয় প্রবাসী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “প্রবাসীর অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের সবার”। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার পূর্বে সার্কিট হাউজ চত্তর থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শিক্ষনবিশি প্রশিক্ষণ দপ্তর, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, ওয়েল ফেয়ার সেন্টার, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত অংশ নেন।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমার সভাপতিত্বে ও হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বিকেটিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী পলাশ কুমার বড়ুয়া, মহিলা টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আশরিফা তানজীম। বক্তব্য রাখেন। এসময় প্রবাসী কল্যান ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আরও বলেন, প্রবাসীরা আমাদের অমূল্য সম্পদ। কোন এলাকায় একজন প্রবাসী থাকলে সে এলাকার যুবক ছেলেদেরকে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। এতে দেশের বেকার সমস্যা যেমন সমাধান হয় তেমনি অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হয়। তাই প্রবাসীদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত। প্রবাসীরা যেরূপ তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে এই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেরূপ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের মাধ্যমে রেমিটেন্স আরও অনেক গুণ অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১৬৮টি দেশে বৈধভাবে কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের অধিক বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী কর্মরত আছেন এবং তাদের প্রেরিত রেমিটেন্স আমাদের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ইংরেজি পর্যন্ত সর্বমোট ১১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫১ জন বাংলাদেশীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিএমইটি তথা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্তান মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার অবস্থান দ্বিতীয় এবং চট্টগ্রাম জেলার প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ইংরেজি পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৭৮৫ জন পুরুষ ও ৩৫৭ জন মহিলাসহ মোট ৩৮ হাজার ১৪২ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ৬১ হাজার ২’শ ৪৯জন অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীর নাম কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকে নিবন্ধন এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ৪০১ জন প্রবাসী কর্মীর মৃতদেহ বিমানবন্দরে গ্রহণ ও মৃতের ওয়ারিশদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃত কর্মীর লাশ পরিবহণ ও দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ৩৫ হাজার টাকার টাকার চেক মৃতের ওয়ারিশদের প্রদান করা হয়। একই সাথে রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রেও চট্টগ্রাম জেলা দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। চলতি সালের গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ জেলায় প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ সর্বমোট ৯১২.৭ মিলিয়ন ইউ এস ডলার। ৬১ হাজার ২’শ ৪৯জন অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীর নাম কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকে নিবন্ধন এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলায় বিকেটিটিসি, মহিলা টিটিসি, টিটিসি রাউজান ও সন্ধীপ অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীদের প্রাক-বর্হিগমন প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন।
জেএন/এমআর