২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারামুক্ত হলেন। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি পান।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) জামিনের কাগজপত্র কারাগারে আসলে যাচাই-বাছাই ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টা ৪ মিনিটে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।’
এদিকে বিএনপির এই নেতার মুক্তির খবরে সকাল থেকেই কারাফটকে শত শত নেতাকর্মীরা ভিড় জমান। পরে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কারাগারের মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে যান। এ সময় শত শত নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান কারামুক্ত বিএনপির এই নেতা।
মুক্তি পেয়েই সরাসরি চলে যান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পিন্টু। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুস সালাম পিন্টু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি তাদের সেই ত্যাগকে যেন ভুলে না যাই।আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুনভাবে দেশ গড়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে আমরা সেই কাজ করবো না। তারা যে নির্যাতন আর অপকর্ম করেছে, আমরা তা করবো না। আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে।’
কারাগারে থাকাকালীন নিজের উপরে চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে কারেন্টের শক দেওয়া হয়েছে। মারপিট করা হয়েছে। কোর্টের বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। এমনকি আমার মা মৃত্যুবরণ করলেন তার জানাজায় যাওয়ার অনুমতি থাকার পরেও আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। আমি এসব নির্যাতনের কথা ভুলতে পারবো না। দেশের সকল মুক্তিকামী জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের ত্যাগের কারণে আজকে আমি মুক্তি পেয়েছি।’
উল্লেখ্য, ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির সাজা পেয়েছিলেন আব্দুস সালাম পিন্টু। গত ১ ডিসেম্বর এই মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আব্দুস সালাম পিন্টু ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন। এর পর থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।
জেএন/এমআর