২০২৪ সালের শুরু থেকেই দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বাড়তে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ফলে ওই মাসটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই কমে যায়। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও হাওয়া লাগে রেমিট্যান্সের পালে। হু হু করে বাড়তে শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সদ্যবিদায়ী ২০২৪ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে বৈধপথে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৬৮৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। গত বছর (২০২৩ সাল) পুরো সময়ে এসেছিল ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ১৯১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯৭ কোটি ডলার।
২০২৩ সালে মাত্র দুই মাসে (মার্চ ও জুন) রেমিট্যান্স প্রবাহ দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
সদ্যবিদায়ী বছরে জুলাইয়ে সবচেয়ে কম আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের দেশের ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এতদিন একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার তালিকায় শীর্ষে ছিল ২০২০ সালের জুলাই মাস। করোনাকালীন ওই মাসটিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে সবশেষ একক কোনো মাসে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
রেমিট্যান্স
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আসে ১৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার
২০২৩-২৪ অর্থবছর ২৩৯১ কোটি ২২ লাখ ডলার
২০২২-২৩ অর্থবছর ২১৬১ কোটি ডলার
২০২১-২২ অর্থবছর ২১০৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার
২০২০-২১ অর্থবছর ২৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বরে) এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮০ কোটি ডলার।
এদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় বেড়েছে রিজার্ভের পরিমাণও। রেমিট্যান্সের সঙ্গে রিজার্ভে যোগ হয়েছে বিদেশি অনুদানও। আর এসব কারণে রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিয়ম অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ দশমিক ০৯ বিলয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩৯১ কোটি ২২ লাখ ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১৬১ কোটি ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১০৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
জেএন/এমআর