চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তণ করে শুক্রবার থেকে বাণিজ্যিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
শুক্রবার সকালে পতেঙ্গা প্রান্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের গাড়ি থেকে টোল আদায়ের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের শুরু হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরুর আগেই এক্সপ্রেসেওয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। বুধবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামেই ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়ক’ নামকরণ করা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ তথ্য নিশ্চিত করে।
তাছাড়া এক্সপ্রেসেওয়ের টোলও নির্ধারণ করে একটি নোটিশও টাঙ্গানো হয়। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
টোল দিয়ে ১০ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
টোল হার অনুসারে, পতেঙ্গা থেকে জিইসি পথে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অটো (তিন চাকা) ৩০ টাকা, প্রাইভেট কার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রেবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা ও কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা টোল দিয়ে চলাচল করতে হবে।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, “পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি টোল প্লাজা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই ওঠা-নামা করা সব গাড়ির টোল আদায় করা হবে। আপাতত সিডিএ টোল আদায় করবে। পরে টেন্ডারের মাধ্যমে এ কাজের জন্য আমরা অপারেটর নিয়োগ করব।
এর আগে ২০২৪ সালের অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল শুরু করলেও এত দিন কোন টোল আদায় করা হয়নি।
তাছাড়া এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল ও ট্রেইলার চলাচল নিষেধ। মোটর সাইকেল চলাচলের বিষয়টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিডিএ প্রস্তাব করলেও অনুমোদন মেলেনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে।
এর আগে, নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে।
২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন।
গত বছরের ১৬ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে নগরের মুরাদপুরে নিহত হন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ ওয়াসিম আকরাম। নিহত ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
বুধবার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাদ দিয়ে ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়ক’ নামকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সিডিএ সূত্র জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি র্যাম্প বিভিন্ন কারণে আপাতত নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। বাকি র্যাম্পগুলোর কয়েকটি র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য : নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল তিন বছর।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এদিকে গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের আমবাগান এলাকার শেখ রাসেল পার্ক পরিদর্শন করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
জেএন/পিআর