চট্টগ্রাম নগরীর সব পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ইচ্ছে করে কাটা হচ্ছে। এ পাহাড় কাটা রোধ করতে হবে। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
তিনি শুক্রবার (৩ জানুয়ারী) বিকেলে নগরীর লাভলেইনস্থ স্বরণিকা কনভেনশন হলে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ইঞ্জিনিয়ার হাবিব উল্লাহর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, ব্যাংকের ডিএমডি ফজলুর রহমান চৌধুরী।
চট্টগ্রামকে নিয়ে বলা গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের কথা তুলে ধরে চসিক মেয়র বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা বলেছেন, চট্টগ্রামে এলে উনার ভালো লাগে। চট্টগ্রামের পরিবেশ ভালো লাগে। সিআরবিতে বসে থাকতে উনার ভালো লাগে। তিনিসহ চট্টগ্রামবাসীর ওপর দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। তাই চট্টগ্রামের সুন্দর লাগার সেই পরিবেশ আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে হবে। এটার দায়দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে।
পতেঙ্গার বিনোদন কেন্দ্রের কথা তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত বলেন, পতেঙ্গায় আন্তর্জাতিক মানের একটি বিনোদন কেন্দ্র যেটিকে আমরা ফোকাস করতে পারছিলাম না, সেদিন পুরো এলাকাজুড়ে লাইটিং করে দিয়েছি। নারীদের জন্য ওয়াশ রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছি৷ সেখানে সবুজ বনায়ন করে দিয়েছি। এখন সেখানে একটা চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে শহরকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করতে হবে মন্তব্য করে ডা. শাহাদাত বলেন, একটা মিনারেল ওয়াটার অর্থাৎ প্লাস্টিকের বোতল, একটা পলিথিন, ককশিট, যদিও এগুলো পানিতে পচনশীল না। তবে এগুলো জলাবদ্ধতার কারণ, তারপরও ফেলছি। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে শহরকে সুন্দর রাখতে কতটা দায়বদ্ধ আমরা! বিদেশে গেলে তো এসব আমরা ফেলি না, কিন্তু এখানে ফেলছি কেন? তাই দোকানের সামনে ডাস্টবিন বসানো হবে। যদি ময়লাগুলো তারা সেখানে না ফেলে তাহলে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
তিনি বলেন, একটি প্রকল্প নিয়েছি। সারা চট্টগ্রামের প্রতিটি জায়গায় বিন দিয়ে দিব। তাহলে ময়লাগুলো সেখানে ফেলতে পারবে। পথচারীরাও রাস্তায় না ফেলে বিনে ফেলবে। প্রত্যেকটা দোকানদারকে সেই দায়িত্ববোধের জায়গায় নিয়ে আসতে চাই। তাদের যে ট্রেড লাইসেন্স আছে আমি বলে দিয়েছি, ময়লা যদি দোকানের সামনে রেখে বিনে না ফেলে প্রথমত সতর্ক করে পরে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। এ ধরনের কিছু উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে শহরকে সুন্দর রাখার জন্য। এটা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল হাশেম বক্কর বলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন, বিত্তবানরা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য দাতব্য চিকিৎসালয়, পুকুর খননসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে এগুলো অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন সমাজের অনেক বিত্তশালী আছে, যারা একটি ব্যাংক থাকলে সেখান থেকে দশটি ব্যাংক করার কথা চিন্তা করেন। একটি ইন্ডাস্ট্রি থাকলে সেখান থেকে গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি করার চিন্তা করেন। তারা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা চিন্তা করেন না। সেই জায়গায় আল আরাফা ইসলামী ব্যাংককে ব্যতিক্রম দেখতে পাচ্ছি। তারা অসহায় মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ সহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তাদের এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকেও সাধারণ মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এটা অব্যাহত থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে ফরমান আর চৌধুরী বলেন, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতি বছর বৃত্তি প্রদান করে থাকি। স্বাস্থ্য খাতে আমরা ভূমিকা রেখে আসছি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিস সমৃদ্ধ হাসপাতাল হচ্ছে। দেশে বন্যা ও যেকোনো দুর্যোগে আমরা সাহায্যের হাত বাড়াই। প্রতি বছর ব্যাংকের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করে থাকি। এবারও সারা দেশের ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আল আরাফাহ ব্যাংকের চট্টগ্রামের জোনাল হেড মোহাম্মদ আযম। কোরান তেলোয়াত করেন ব্যাংকের হাটহাজারী শাখার ম্যানেজার চালামত উল্লাহ। বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের ওআর নিজাম রোড শাখার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বাবু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, সদস্য গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, কোতোয়ালী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাকির হোসেন ও জিয়াউর রহমান জিয়া।
জেএন/এমআর