চালের ঘাটতি নেই, মজুতদারির কারণে দাম বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

আলু ছেড়ে সিন্ডিকেটের নজর চালের দিকে

বাজার স্থিতিশীল রাখতে আসছে পৌনে ২ লাখ টন চাল: খাদ্য উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক

আমনের ভরা মৌসুমেও রীতিমতো অস্থির চালের বাজার। গত দুই দিনের ব্যবধানে শুধু মোটা চালের কেজিতেই বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। সরু ও মাঝারিমানের চালের দরও বাড়তি। এক মাসের বেশি সময় ধরে চালের বাজারের এই অবস্থা। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে।

- Advertisement -

কারণ, চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ শতাংশের কাছাকাছি। যা নভেম্বর মাসের তুলনায় সামান্য কম। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় মূল্যস্ফীতির হার এখনো চড়া।

- Advertisement -google news follower

কিন্তু আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে কেন? সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত: মজুতের কারণেই চালের দাম বাড়ছে।

সূত্র বলেছে, গত মৌসুমে যারা হিমাগারে আলু মজুত করেছিল তারা প্রচুর মুনাফা করেছে। এবার এই মজুতদাররা চাল মজুত করেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে চালের দর বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে এর কারণ হিসেবে মজুতদারিকে দায়ী করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টাও। তিনি বলেন, বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। বাজারেও চালের ঘাটতি নেই। ফলে চালের যে মূল্যবৃদ্ধি, তা অযৌক্তিক। ইতিমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নির্দেশ দিয়েছে।

- Advertisement -islamibank

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বাজারদর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সংস্থাটিও তাদের প্রতিবেদনে চালের দর বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত এক মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। এর মধ্যে গত দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালে ৪ টাকা বেড়ে তা ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে তা ৭০ থেকে ৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজধানীর খুচরাবাজারে ভালো মানের নাজিরশাইল চালের দাম ৯০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মজুতদারিকে দায়ী করলেও মিলাররা বলেছেন, ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। তারা বলেছেন, এবার ধানের দাম গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের চালের মোকাম সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্যবসায়ী মেসার্স অন্তিম সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা বলেন, গত বছর মোটা ধানের মণ ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এবার তা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতি মণ মোটা ধানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া, সরু ধানের মণ ২০০ টাকা বেড়ে এবার ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের আরেক বড় চালের মোকাম বগুড়ার শেরপুর।

এই মোকামের ব্যবসায়ী আজিম বয়লারের স্বত্বাধিকারী হানিফ উদ্দিন বলেন, এবার আলুর দাম পাওয়ায় মজুতদাররা আলু বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণে ধান মজুত করেছে। ফলে মোকামে চাহিদা অনুযায়ী ধানের সরবরাহ নেই।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারের গুদামে ৮ লাখ টন চাল মজুত আছে। যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া, চালের দাম বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের পরিমাণও সন্তোষজনক নয়। এবার চলতি মৌসুমে সরকার সাড়ে ৬ লাখ টন চাল ও ৩ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত নভেম্বরে এই সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টন চাল সংগ্রহ করা গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সংগ্রহ অভিযান কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেশির কারণে বেসরকারি খাতেও যথেষ্ট পরিমাণে চাল আমদানি হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ১ জুলাই থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ১৭ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে চাল আমদানি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি) এই চাল সরবরাহ করবে।

এছাড়া, মিয়ানমার থেকে জি-টু-জি (দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি) ভিত্তিতে ১ লাখ টন চাল আনা হবে। সবমিলিয়ে সরকারিভাবে মোট ৯ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চলতি (জানুয়ারি) মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারিভাবে ১ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল দেশে আসবে। এ চাল এলে দাম কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা

হয়েছে। ওএমএস কার্যক্রম চলছে, সেটি আরো জোরদার করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বেগুনবাড়ি এলাকার দীপিকার মোড়ে নতুন স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির জানুয়ারি মাসের পণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM