লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুহারা

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল: নিহত বেড়ে ১৬

ভিনদেশ ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ‍্যাঞ্জেলেসের আগুন দীর্ঘ পাঁচ দিনেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখনো ছয় স্থানে আগুন জ্বলছে।

- Advertisement -

বৃষ্টির অভাব আর ঝড়ো বাতাস আগুন নিয়ন্ত্রণের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে বাড়িঘর ছেড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। দাবানলে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে।

- Advertisement -google news follower

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেসের কাউন্টি করোনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনার বা করোনারে কার্যালয় দাবানলের কারণে নিহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে তালিকায় নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় বা বিবরণ দেওয়া হয়নি।

- Advertisement -islamibank

নথিতে বলা হয়েছে, দাবানলের কারণে প্যালিসেডস ফায়ার জোনে ৫ জন এবং ইটন ফায়ার জোনে ১১ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে দাবানল। স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে এ প্রবণতা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শুক্রবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে বাতাসের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। ক্লান্ত অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের জন্য এটি কিছুটা স্বস্তির হলেও দাবানলের দিক পরিবর্তনের ফলে নতুন করে উপদ্রুত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা। দাবানল নিয়ন্ত্রণে পানির সংকটের বিষয়টির স্বাধীন তদন্ত চেয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বাতাস আবারও তীব্র হওয়ার পূর্বাভাস থাকায় শঙ্কিত উপদ্রুত ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেসব অধিবাসী উপদ্রুত এলাকা ছেড়ে গেছেন, তাঁদের এখনই না ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ প্রধান ম্যাকডনেল।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্যালিফোর্নিয়া সফরের অনুরোধ জানিয়েছেন গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।

একই সঙ্গে তিনি দাবানল নিয়ে রাজনীতি না করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক্সে দেওয়া পোস্টে এই আহ্বান জানান তিনি।

পোস্টে গ্যাভিন নিউসম বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই কোনো মানবিক বিপর্যয়কে রাজনীতিকীকরণ করা উচিত নয়। ভুল তথ্যও ছড়ানো উচিত নয়।’

তিনি বলেন, হাজার হাজার আমেরিকান তাঁদের ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতির দ্রুত উত্তরণ ও উপদ্রুত এলাকার পুনর্গঠনে তাই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আলটাডেনা ও পাসাডেনা এলাকার অধিবাসীরা এমন ভয়াবহ দাবানল এর আগে কখনো দেখেনি বলে জানিয়েছেন সেখানকার সিনেটর সাশা রিনি পেরেজ। এই পরিস্থিতিতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে পানিসংকটের বিষয়টি।

লস অ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের ক্যাপ্টেন অ্যাডাম ভ্যান গার্পেন বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা যা করি, তা হলো অন্য জায়গা থেকে পানি এনে ট্যাংকে রাখি। তবে এটি অগ্নিপ্রতিরোধ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে।’

অ্যাডাম ভ্যান গার্পেন বলেন, অগ্নিনির্বাপণকর্মী হিসেবে তাঁরা আশা করেন যে ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো ঠিকমতো কাজ করবে এবং তাতে পানির যথাযথ চাপ থাকবে।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিনিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রোলি জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে ভুগছে তাঁর শহর।

তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার যে অগ্নিনিরাপত্তা দপ্তরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। যে অবস্থায় আছি, সেই অবস্থায় আমরা থাকতে পারি না।’

নিউইয়র্কের পল স্মিথ কলেজের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস শেখ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, শহরের অগ্নিনির্বাপক কাঠামো ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া আগুন ঠেকাতে যথেষ্ট নয়।

ভয়াবহ এই দাবানলের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে সে বিষয়েও নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

লস অ্যাঞ্জেলেসের পানি ও জ্বালানি বিভাগের প্রধানকে লেখা চিঠিতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বলেন, ‘এটি কীভাবে হলো তার উত্তর আমাদের জানা প্রয়োজন।’

পানি ও পানির চাপে ঘাটতির বিষয়টিকে মারাত্মক সংকট হিসেবে উল্লেখ করে এ বিষয়ে একটি স্বাধীন প্রতিবেদন তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

রোববার (১২ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ বলা হয়েছে, দাবানলটি স্থানীয় সময় শনিবার (১১ জানুয়ারি) থেকে দিক পরিবর্তন করে আরও পূর্ব থেকে উত্তর–পূর্ব দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ কারণে জ্বলতে থাকা আগুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দশ হাজারের বেশি অবকাঠামো আগুনে পুড়ে গেছে।

আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার জানিয়েছে, দাবানলে এ পর্যন্ত ২০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ‘প্যালিসেইডস’ দাবানল থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ শহরটি ছেড়েছেন।

দাবানল নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে দাবানল নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন বাইডেন।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM