রাজীব সেন প্রিন্স : শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়ি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে সাবেক ৩০ জন এমপির। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সংসদ ভেঙে যাওয়ায় কপাল পোড়ে দ্বাদশ সংসদের এসব সদস্যদের।
এমপি থাকাকালীন তাদের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা বিলাসবহুল ৩০টিসহ মোট ৭২টি গাড়ি নিলামে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আগামী ২১ জানুয়ারি দরপত্র প্রকাশের প্রস্তুতি রয়েছে।
তবে নিয়ম অনুযায়ী বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিলামের আগে শুল্কসহ ছাড়িয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হলেও ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর সংসদ ভেঙে যাওয়ায় সাড়া নেই ৩০ এমপির। এখনো সাড়া মিলছে না অনেক আমদানিকারকদেরও।
জানা গেছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেড পরিদর্শন করে পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। নতুন কার শেডে পড়ে থাকা গাড়ি খালাস কিংবা নিলামে তুলতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি।
নৌ-উপদেষ্টার চোখ রাঙানির পর নড়েচড়ে বসে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা বিলাসবহুল গাড়িগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নিলামে তোলার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। টনক নড়েছে আমদানিকারকদেরও। শুল্ক কর দিয়ে ইতোমধ্যে ৩১টি গাড়ি ডেলিভারি নিয়েছেন, অনেকে আবেদন করেছেন কাস্টম হাউসে।
সবশেষ কাস্টমস হাউস সূত্র মতে সাবেক এমপিদের আমদানি করা ৩০টি ল্যান্ডক্রুজারসহ ৭২টি গাড়ি ইনভেন্ট্রির পর দর নির্ধারণে শুল্কায়ন শাখায় পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে কাস্টমস নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন জানান,বন্দরে পড়ে থাকা ৭২টি গাড়ির ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা এগুলোর ভ্যালুর জন্য শুল্কায়ন শাখায় পাঠানো হয়েছে। এগুলোর ভ্যালু আসলে আগামী ২১ জানুয়ারি নিলামের দরপত্র ছাড়া হবে।
জানা গেছে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যে কেউ গাড়ির অনলাইন নিলামে অংশ নিতে পারবে। এজন্য জমা দিতে হবে টিআইএন, এনআইডি ও আয়কর সনদ।
তবে অনলাইনের পাশাপাশি পে অর্ডারের কপিও টেন্ডার বাক্সে জমা দিতে হবে। যদিও ভালো সাড়া পেতে অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি নিলামের দাবি বিডারদের।
বিডারদের অভিযোগ আমদানিকারকদের রিট নিষ্পত্তিতে কাস্টম হাউজের আইন শাখা নিষ্ক্রিয়। ফলে বিপুল ব্যয়ে আমদানি করা গাড়িসহ অনেক পণ্যই বন্দরের শেডে বছরের পর বছর পড়ে থেকে নষ্ট হয়। এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কাস্টমসের একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরকে গাড়ির গুদাম হিসেবে ব্যবহারের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শোরুমে গাড়ি রাখার খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই আমদানির পর বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বন্দরের শেডেই ফেলে রাখেন।
এদিকে মামলা জটিলতাসহ নানা কারণে এসব গাড়ি যথাসময়ে নিলামে না উঠায় বন্দরের শেডে জায়গার অপচয়ের পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও থমকে থাকে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘আমদানিকারকদের কাগজপত্রের ঝামেলার কারণে অনেক সময় তারা নিতে পারে না। এছাড়া মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় দেরি হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলাগুলো করা হয় কাস্টমসের বিরুদ্ধে। এতে কাস্টমসের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার (ক্ষমতা) আছে। আইন শাখা আছে। উনারা এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে ফলোআপ করলে জট সৃষ্টি হয় না।
এদিকে ‘নিলামের যে পদ্ধতি বা আইন সেটাকে আরো সহজীকরণ করা প্রয়োজন মন্তব্য করে চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, একটা গাড়ির দাম ছিল ১ কোটি টাকা, পড়ে থাকতে থাকতে সেটা এখন ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে হবে, কিন্তু আইনের কারণে কাস্টম কর্তৃপক্ষ তাতে অনুমতি দিতে পারছে না ।’
জানা গেছে, তৎকালীন সামরিক সরকার এইচ এম এরশাদ ১৯৮৭ সালে এমপিদের প্রথম শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানটি বাতিল করলে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিধানটি আবার চালু করে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জেএন/পিআর