দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি রূপ্তানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগরী চট্টগ্রামে বন্দর সুবিধার কারণে গড়ে উঠেছে ইস্পাত কারখানা, সিমেন্ট, জাহাজ ভাঙা শিল্প, পোশাক কারখানা, রাসায়নিক কারখানা, জুতা কারখানা, কনটেইনার ডিপোসহ আমদানি, রপ্তানি ও ট্রেডিং ব্যবসার বহুমাত্রিক হালকা ও ভারী শিল্প কারখানা এবং প্রতিষ্ঠান।
অতচ গেল দেড় দশকেও শুধুমাত্র পূনাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে অগ্নি ও বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনায় আহতরা চিকিৎসার সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত চট্টগ্রামবাসী।
যথাযথ স্থানের অভাব, অর্থ সংকটসহ নানা অজুহাতে এ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট নির্মাণে কালক্ষেপন আর মেনে নেবে না হুঁশিয়ারি দেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাব নের্তৃবৃন্দরা জানান, চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় কোটি মানুষের বসবাস হলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আগুনে পোড়া, গরম পানিতে ঝলসানো ও বৈদ্যুতিক শকে দগ্ধ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মাত্র ২৬টি বেড আছে। যেখানে মাসে গড়ে ৯শ থেকে এক হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপতুল।
এদাঞ্চলের ৫ কোটির অধিক মানুষের একমাত্র রেফারেন্স চমেক হাসপাতাল হলেও আগুনে পুড়ে যাওয়া বেশিরভাগ রোগীকে নিতে হয় ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটসহ অন্যান্য হাসপাতালে।
তাই যে কোন অজুহাতে চট্টগ্রামে পূর্নাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মানে জটিলতা পরিহার করে দ্রুত হাসপাতাল নির্মানে জরুরি উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন ক্যাব।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দরা আরও বলেন, চট্টগ্রাম দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ শহর হলেও পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল না থাকায় আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী হতে হয়।
চট্টগ্রামে বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বিগত দেড় দশকেও চট্টগ্রামে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
যথাযথ স্থানের অভাব, অর্থ সংকটসহ নানা অজুহাতে এ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি অগ্নিদুর্ঘটনায় আহত লোকের সংখ্যাও বাড়েছে।
অগ্নিকান্ডের পর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে বেগ পেতে হচ্ছে। ঢাকায় নেয়ার পথে অনেকে মারা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ জরুরি।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিয়তই দগ্ধ রোগী বেড়েই চলেছে, চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেলেও চমেক বার্ন ইউনিট কাগজকলমে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও শয্যা ও মেঝে মিলে এখানে রোগী থাকে গড়ে ৫৫ থেকে ৬০ জন।
শীতকালে সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ, শীতকালে আগুন পোহানোসহ নানা কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। বার্ন ইউনিটের নিজস্ব নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। রোগীর চাপে দিশেহারা সক্ষমতাহীন বার্ন ইউনিট।
একদিকে জনবলসংকট, অন্যদিকে সংকটাপন্ন রোগী ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এই বার্ন ইউনিট। এ অবস্থায় ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
বিবৃতিতে নেতৃবন্দ আরও বলেন, চমেক ক্যাম্পাসে ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও হাসপাতাল নির্মানে জায়গা নিয়ে জটিলতা ও নানা কারণে চট্টগ্রামে স্বতন্ত্র একটি বার্ন হাসপাতালটির নির্মান কাজ পুরোদমে শুরু করতে পারে নি।
চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা(ইআইএ) ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনার মুখে নির্মান কাজ স্থবির হলে চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে।
যে কোন অজুহাতে নির্মান কাজের জটিলতা ও কালক্ষেপন কোনভাবে মেনে নেয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এই বার্ন হাসপালের নির্মান কাজ ত্বরান্বিত করা না হলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি কলামিস্ট মুসা খান ও সদস্য সচিব সাংবাদিক আবু মোশারফ রাসেল ও যুগ্ন সদস্য সচিব সাইদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।
জেএন/পিআর