৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ির নিলাম ডাকল চট্টগ্রাম কাস্টমস

প্রায় ২৩ কোটি টাকার গাড়ি হারাচ্ছেন সাবেক ২৪ মন্ত্রী-এমপি

বিশেষ প্রতিবেদন :

রাজীব সেন প্রিন্স : শুল্কমুক্ত সুবিধায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরে পরে থাকা ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজারসহ ২৬টি বিলাসবহুল গাড়ির নিলাম ডেকেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখা। একই সাথে নিলামে উঠেছে বিভিন্ন মডেলের আরও ১৮টি গাড়ি।

- Advertisement -

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে ই-অকশনের ওয়েবসাইটে আগ্রহীরা নিলামের ক্যাটালগ দেখতে পারবেন এবং এদিন সকাল ৯টা থেকে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত অনলাইনে দর জমা দিতে পারবেন।

- Advertisement -google news follower

আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় দরপত্রের বাক্স খোলা হবে। এর মধ্যে আগামী ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাড়িগুলো দেখার সুযোগ রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদের যেসব সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি আমদানি করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল), তারানা হালিম, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবদুল মোতালেব, শাম্মী আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, রুনু রেজা, মো. তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, এস এ কে একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, এস এম কামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, নাদিয়া বিনতে আমিন ও আখতারউজ্জামান।

- Advertisement -islamibank

প্রতিটি গাড়ি আমদানিতে প্রত্যেক সংসদ সদস্যরা ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে গাড়িগুলো তাদের ভাগ্যে জুটছে না। সব মিলিয়ে গাড়ি কেনা বাবদ প্রায় ২৩ কোটি টাকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে এসব মন্ত্রী-এমপিদের।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্যদের জন্য গাড়িগুলো নতুন মডেলের। নতুন গাড়ি আমদানির অর্ডার (ঋণপত্র খোলার) দেওয়ার পরই গাড়ি নির্মাণ শুরু করেছিল জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা।

ন্যূনতম তিন থেকে চার মাসে এসব গাড়ি তৈরি করা হয়। অর্থাৎ নিজেদের পছন্দমতো মডেলের গাড়ি আনার পর এখন তা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।কারণ গাড়িগুলো এবার অনলাইনভিত্তিক ই-নিলামে বিক্রির জন্য তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

নিলামের ক্যাটালগ সূত্রে জানা যায়, মোট ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার এই নিলামে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে জাপানে তৈরি ৩৩৪৬ সিসি ল্যান্ড ক্রুজার জেডএক্স মডেলের ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি রয়েছে ২৪টি। যার প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা।

এছাড়া ২০২১ সালে জাপানে তৈরি ২৬৯৩ সিসি ল্যান্ড ক্রুজার টিএক্স মডেলের গাড়ি রয়েছে ২টি। যার মধ্যে একটির সংরক্ষিত মূল্য ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪ টাকা এবং অন্যটি ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ১২১ টাকা।

গাড়িগুলোর সংরক্ষিত মূল্য (শুল্ক–করসহ) ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে কাস্টমস। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা এই গাড়ি কিনতে পারবেন। এই হিসাবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

নিলামে ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার ছাড়াও জাপানে তৈরি টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়ি আছে মোট ৫টি। এর মধ্যে ২০২২ সালে তৈরি ২৪৮৭ সিসি’র একটি হ্যারিয়ার গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩ টাকা।

২০২২ সালে তৈরি ১৯৮৬ সিসি’র হ্যারিয়ার আইচি একটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছে ৮২ লাখ ৩ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২০২০ সালে তৈরি ১৯৮৬ সিসি’র একটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৯ টাকা।

২০১৯ সালে তৈরি ১৯৮৬ সিসি’র আরেকটি হ্যারিয়ার গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৮২ টাকা।

এছাড়া ২০১৮ সালে তৈরি ১৯৮৬ সিসি’র আরেকটি হ্যারিয়ার গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৭ টাকা।

নিলামে জাপানি টয়োটা র‌্যাভ ফোর মডেলের ১৯৮৬ সিসি’র গাড়ি রয়েছে দুটি। এর মধ্যে ২০২০ সালের মডেলের গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ৫৬ লাখ ২২ হাজার ১০৭ টাকা এবং ২০১৯ সালের মডেলের গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গাড়ির এই নিলামে রয়েছে ২০২৪ সালে চায়নায় তৈরি হোয়ো ৩৪০ মডেলের ১০টি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক। যার মধ্যে ধরনভেদে ৬টির প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩২ টাকা।

বাকি ৪টির সংরক্ষিত মূল্য ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮১ টাকা। নিলামে একটি গাড়ি রয়েছে টয়োটা এস্কোয়ার ২০১৯ সালের মডেলের। ১৯৮৬ সিসি’র এই গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৩৮ হাজর ১৬৮ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম জানান, গাড়িগুলো একেবারেই নতুন। ভালো অবস্থায় গাড়িগুলো বিক্রি হলে ক্রেতা ও সরকার উভয়ই লাভবান হবে।

এই নিলামে ভালো বিডার বা অংগ্রহণকারী পাওয়ার জন্য অনলাইন নিলাম ডাকা হয়েছে। এর ফলে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে আগ্রহীরা গাড়ির নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সাবেক সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলোর বিষয়ে কাস্টমস উপকমিশনার বলেন, সংসদ সদস্যের মেয়াদে শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস হওয়া একেকটি গাড়িতে অগ্রিম আয়কর বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার।

এখন প্রথম নিলামে বিক্রি করা গেলে একেকটি গাড়িতে সোয়া ৭ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এ হিসাবে গাড়িগুলো থেকে ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা রয়েছে।

কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার বলেন, ২৬টি বিলাসবহুল মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, যা ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেখার সুযোগ পাবেন নিলামে আগ্রহীরা।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM