চট্টগ্রামের ৫ থানার পুলিশ সাইফুল-সাজ্জাদে তটস্থ

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামের পাঁচ থানার পুলিশ তটস্থ দুই চিহ্নিত সন্ত্রাসীর কাছে। তাদের নিজস্ব বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে দিশেহারা বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, খুলশী, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী থানার অন্তত ২০ লাখ মানুষ। সবার কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুল (৩৪) ও সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ (২৫)। খুন, অপহরণ, ছিনতাই, জমি দখল– এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তারা করেন না। কিন্তু পুলিশ তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারে না। ফেসবুক লাইভে গত মঙ্গলবার সাজ্জাদ হত্যার হুমকি দিলে জিডি করেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার। সিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে তথ্যদাতা ও সহায়তাকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।

- Advertisement -

নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সাইফুল বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনির নুরুল আমিনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৯টি মামলা রয়েছে। সাইফুলের দুই ভাই– সবুজ ওরফে বার্মা সবুজ ও মো. ফাহিমও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তিন ভাইয়ের শতাধিক সদস্যের আলাদা বাহিনী রয়েছে। সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে অন্তত ৩৫টি। অন্যদিকে সাজ্জাদ হাটহাজারী থানার শিকারপুর গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধেও তিন খুনসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

- Advertisement -google news follower

স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, খুলশী থানা ও আশপাশের এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ করে তিন ভাই। গত ১১ অক্টোবর বায়েজিদ থানার শান্তিনগর এলাকায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন মোহাম্মদ ইমন (২৮)।

ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাইফুল ও সবুজকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর পর গত ২৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন সবুজ।

- Advertisement -islamibank

২০১০ সালে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অপরাধে হাতেখড়ি সাইফুলের। এর পর নানা অপরাধে কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। কিন্তু প্রতিবার জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সক্রিয় হন সাইফুল। নগরের ষোলশহর এলাকায় জুয়ার আসর ও মাদকের ডেরা খোলেন। স্থানীয়দের সহায়তায় মাদকের আখড়া ও জুয়ার আসর বন্ধ করে পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা গত ১২ জানুয়ারি দিন-দুপুরে লোকজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। নাসির উদ্দিন জানান, এলাকায় জুয়া, মাদকসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কমিটি করা হয়। কমিটির তথ্যে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আখড়া বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বার্মা সাইফুলের নেতৃত্বে স্থানীয়দের ওপর হামলা চালানো হয়।

গত ২৫ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে মন্দিরের পুরোহিতসহ তিনজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে বার্মা সাইফুলের বাহিনী। পরে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন বাছির আহম্মদ ওরফে রানা। গত ১১ অক্টোবর বাছিরকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে সাইফুল বাহিনীর হামলার শিকার হয় পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বায়েজিদ থানা পুলিশের সঙ্গে সাইফুলের সখ্য রয়েছে। এ জন্য অন্যান্য থানা এলাকায় অপরাধ করেও তিনি নিরাপদ আছেন নিজের এলাকায়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও সাইফুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত ২৬ জানুয়ারি রাতে তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন– তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী কি আওয়ামী দোসরদের তৈরি করা তালিকা? সেদিন ওসি ফোন করে বললেন, কয়েকজন স্থানীয় ছেলেকে রাতে পুলিশের টহল টিমকে সহযোগিতার জন্য পাঠাতে। তখন তালিকা কি পকেটে থাকে?

এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘একজন সন্ত্রাসীর কাছে কেন সহযোগিতা চাইতে যাব? সন্ত্রাসীরা নিজেকে রক্ষায় অনেক কিছুই বলে। সাইফুল ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সে থাকতে পারে– এমন সম্ভাব্য সব জায়গায় হানা দেওয়া হচ্ছে। তার সহযোগীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

তিন খুনের পরও অধরা সাজ্জাদ

বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই ফোন আসে সাজ্জাদের। চাঁদা দিতে গড়িমসি করলে শিষ্যদের দিয়ে হামলা করান। নয়তো প্রকাশ্যে চালান গুলি। বিদেশে পলাতক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের শিষ্য হিসেবে ছোট সাজ্জাদের অপরাধে হাতেখড়ি হলেও, এখন নিজেই চালান বাহিনী। গত বছরের ২৯ আগস্ট রাতে নগরের কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে আধিপত্যের লড়াইয়ে গুলিতে নিহত হন মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছার (৩২)। এ ঘটনায় হাটহাজারী ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুলে নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে গুলি চালান সাজ্জাদ। ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে গুলি করে হত্যা করেন ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৬)। পরে গত ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালালে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। দুই পুলিশসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই মাসেও তাঁর নাগাল পায়নি পুলিশ। অবশ্য ২৭ জানুয়ারি অস্ত্রসহ তাঁর ছয় অনুসারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় সাজ্জাদের বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত পাঁচ বাসিন্দা জানান, মানুষ সাজ্জাদের বাহিনীর কাছে অসহায়। এখানে তাঁকে চাঁদা না দিয়ে একটি ইটও সরানো যায় না। একে একে তিনটি খুনের পরও আঁতাতের কারণে সাজ্জাদকে ধরে না পুলিশ।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (জনসংযোগ) রইছ উদ্দিন বলেন, সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে গেলে গুলি করে পালিয়ে যান তিনি। গ্রেপ্তার করে তাঁর কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করাই পুলিশের লক্ষ্য।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM