চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ডিসি পার্কে নিয়োজিত আনসার ও প্রহরীদের সঙ্গে মারামারির জেরে নগরের কাস্টমস ও সল্টগোলা মোড় এলাকায় সড়কের উভয় পাশে সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভ করেছে প্রাইম মুভার শ্রমিকরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ট্রাক-লরি এলোপাতাড়ি করে রেখে এবং সড়কের উপর ইট-বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে রাখেন ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকেরা।
ফলে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
এতে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য লোড-আনলোড এবং ডেলিভারি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বাসে অবরোধের আট-নয় ঘণ্টা পর বুধবার সকালের দিকে শ্রমিকেরা সড়ক ছাড়েন। এরপর সড়কটি দিয়ে পুনরায় পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু হয়।
তবে সমন্বয়ক-প্রশাসনের আশ্বাসেও স্টিয়ারিংয়ে হাত দেননি প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার চালকরা। ফলে সকল প্রকার পণ্যবাহী গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ-বহির্গমন বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় কনটেইনার জটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাস্টমস ও সল্টগোলা মোড় এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তখনো সড়কের এক পাশে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ‘এক দফা এক দাবি, ডিসি পার্ক বন্ধ চাই’, ‘আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
পণ্যবাহী লরি সড়কের দুই পাশে দাঁড় করিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন চালক-সহযোগীরা। এতে বন্দর-পতেঙ্গা সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকল প্রকার পণ্যবাহী গাড়ির বন্দরে প্রবেশ-বহির্গমন বন্ধ রয়েছে।
রাস্তার একপাশে সরু জায়গা দিয়ে বাস-সিএনজি-রিকশা চলাচল করলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয় যাত্রীদের। অবরোধের কারণে বন্দরের পাশাপাশি পতেঙ্গা, অলংকার ও বিমানবন্দর এবং শেখ মুজিব রোডেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
এসময় সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন এবং অনেককে দীর্ঘপথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এদিন দুপুর ১টা পর্যন্ত সড়কে যানজট দেখা যায়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের জানান, শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা, আহতদের চিকিৎসা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, ডিসি পার্কে প্রবেশের বিকল্প পথ ব্যবস্থা করা এবং সড়কে শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন এ ব্যাপারে আশ্বস্থ না করে ততক্ষণ শ্রমিকরা গাড়ি বন্ধ রেখে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে জানান আবুল খায়ের।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার কবির আহম্মদ জানান, অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য শ্রমিক ও চালকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকাল থেকে ডিসি পার্কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান। তবে তিনি ডিসি পার্কে হামলার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানান।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফৌজদারহাট ডিসি পার্কের সামনে ট্রাক ও লরি দাঁড় করানোকে কেন্দ্র করে পার্কের সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে চালক ও সহকারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় জনতা ও ট্রাক চালকরা পার্কে হামলা চালিয়ে পার্কের গেট, টিকিট কাউন্টার এবং বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।
এসময় পার্কের ভেতরে থাকা দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। দর্শনার্থীরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। পার্কের ভেতরে থাকা দোকানদারেরাও দোকান ফেলে পালিয়ে যান। এ সময় ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনার ঘন্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে পৌছে সেনাবাহিনী। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় জনতা ও ট্রাক চালকরা পার্কে হামলা চালিয়েছেন। এ সময় পার্কের গেট, টিকিট কাউন্টার এবং বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, সড়কে দর্শনার্থীদের একটি গাড়ি ও অন্য একটি গাড়ির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে চালকেরা পার্কে ভাঙচুর করেছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
তবে হামলা ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক-লরির শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে আসেন। তখন থেকে তাঁরা সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় রাস্তার উভয় পাশের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে আরও শ্রমিক জড়ো হলে কাস্টমস এলাকায় মিছিল করতে থাকেন এবং সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় রাস্তার উভয় পাশের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। হামলার ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না বলে জানান।
জেএন/পিআর