চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিটের নির্মাণ কাজ মার্চে শুরু

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ আগামী মার্চে শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সংলগ্ন গোয়াছিবাগান এলাকায় ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে এই ইউনিট। এটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চলতি মাসের মাঝামাঝিতে চীন থেকে দেশে পৌঁছানোর কথা আছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ঘর তৈরি করা হয়েছে। ‘চায়না এইড প্রজেক্ট অব বার্ন ইউনিট অব চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় এটির বাস্তবায়ন হচ্ছে।

- Advertisement -

বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন।

- Advertisement -google news follower

তিনি বলেন, ‘১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ আগামী মার্চ মাসের শুরুতে শুরু হবে। ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা নির্ধারিত আছে। চলতি মাসে ভৌত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সব নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করছে চীন।’

বার্ন ইউনিটে যা থাকছে

- Advertisement -islamibank

তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিটের মধ্যে থাকবে শিশুদের জন্য পাঁচটিসহ ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং তিনটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলা বিশিষ্ট ইউনিটটির প্রথমতলায় থাকবে ইমাজেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দোতলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), চারতলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচইউ), চারতলায় ও পাঁচতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড এবং ছয়তলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে কার্যালয়।’

যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সব কিছু দিচ্ছে চীন

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি। বাকি ১০৫ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে চীন সরকারের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। যেহেতু চীন সরকার প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ অর্থ অনুদান দিচ্ছে, তাই তাদের নির্বাচিত ঠিকাদারই অবকাঠামো নির্মাণ করবে। অবকাঠামো নির্মাণের যন্ত্রপাতি, প্রকৌশলী ও উপকরণ সরবরাহ করবে দেশটি। প্রকল্প শেষে এক বছর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে তারা। অন্যদিকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ সংযোগসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেবে বাংলাদেশ।

বার্ন ইউনিট পরিচালনার জন্য এক হাজার ৬৫ জন জনবল প্রয়োজন হবে। গত বছরের মে মাসে জনবলের প্রস্তাবনা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এতে এক হাজার ৬৫ পদ সৃজনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার সংকট

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এটিকে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও এর বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে। এমনকি নেই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের ২৬ শয্যার ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগুণ। অতিরিক্ত শয্যার পাশাপাশি মেঝেতেও রোগী ভর্তি রাখা হয়। পোড়া রোগীদের জন্য আইসিইউ ও এইচডিইউ জরুরি। শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আইসিইউ বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু চমেক হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ নেই। অপারেশন থিয়েটারও নেই। ফরে পোড়া রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হয়।’

২০২২ সালে প্রকল্পের প্রস্তাবনা

২০১৬ সালে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এর পরের কয়েক বছর ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা কয়েক দফা বৈঠক করলেও নির্মাণের পরিকল্পনা আটকে ছিল স্থান নির্বাচনে। সর্বশেষ ২০২২ সালে চীন সরকার চমেক হাসপাতাল সংলগ্ন গোঁয়াছিবাগান এলাকায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট তৈরির স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায়।

দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের দাবিতে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, বন্দর নগরী হওয়ায় চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে ইস্পাত কারখানা, সিমেন্ট, জাহাজ ভাঙা শিল্প, পোশাক কারখানা, রাসায়নিক কারখানা, জুতা কারখানা, কনটেইনার ডিপোসহ ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। জেলায় কোটি মানুষের বসবাস হলেও দেড় দশকেও বার্ন হাসপাতাল তৈরি হয়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নেই। আগুনে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালে আছে মাত্র ২৬ শয্যা। যেখানে মাসে গড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই যেকোনো অজুহাত বাদ দিয়ে দ্রুত চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট নির্মাণ করতে হবে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM