আলু-সবজি-পেঁয়াজে স্বস্তি

তেল-চালের দামে অস্থিরতা কাটবে কখন?

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এ সপ্তাহেও তেল-চালের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দাম আরও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। ফলে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

- Advertisement -

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ২০ টাকা কেজি দরে মিলছে আলু। পেঁয়াজের দামেও কিছুটা কমতি দেখা গেছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সুখবর।

- Advertisement -google news follower

চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মিলছে না এক লিটারের বোতলজাত সয়বিন তেল।

দুয়েকটি দোকানে থাকলেও লিটারে বাড়তি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে গোপনে বিক্রি করছেন দোকানিরা। তবে বড় দোকানগুলোতে দুই লিটারের বোতল ৩৫০ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

- Advertisement -islamibank

অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়েও বেশির ভাগ দোকাইনে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে প্রতি লিটারে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায।

আবার সেটাও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বাজারে আসা ক্রেতাদের। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী মার্কেট, বক্সির হাট, চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

নগরীর বক্সিরহাট বাজারে লাকি নামে সরকারি এক চাকরিজীবির সাথে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে বাজার করতে এসে তেল কিনতে গিয়ে মাথাটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এ দোকান-ওই দোকান ঘুরেও এক লিটারের সয়াবিন তেল কিনতে পারছি না। বাধ্য হয়ে ১৮০ টাকা দরে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল কিনে বাসায় যাচ্ছি।

মুমিনুল নামে অপর এক ক্রেতা জানালেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে কৃত্রিম সংকটের কারণে, বাজারে এক লিটারের বোতজাত সয়াবিন মিলছে না। খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।

হঠাৎ সয়াবিন তেল উধাও কেন? এমন প্রশ্নে চাক্তাই বাজারের মুদি দোকানদার আমিনুল ইসলাম বলছেন, কোম্পানিগুলো বাজারে যথেষ্ট তেল সরবরাহ করছে না, ফলে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া ভোজ্যতেল সরবারহকারী ভ্যান এলেও তারা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় প্রতিদিন যা দিয়ে যায় তা একদিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তেলের বাজারের এই অস্থিরতার কথা স্বীকার করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন, রমজানের আগে তেল মজুদ রেখে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। সামান্য কিছু পাওয়া গেলেও সাথে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে গেল সপ্তাহের মতোই এখনও চালের বাজারে অস্থিরতা রয়ে গেছে। সব ধরনের চালে ঊর্ধ্বগতি। মিনিকেট চাল ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোলাও চালের দাম ১১৬-১১৮ টাকা প্রতি কেজি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর কর্ণফুলী মার্কেটে কথা হয় রাইসুল সুজন নামে এক ক্রেতরে সাথে, তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রমজানে চালের চাহিদা কম থাকায় সাধারণত দাম তেমন বাড়ে না। তবে এ বছর রমজানের বেশ আগে ভাগেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে।

খাতুনগঞ্জ বাজারের খুচরা মুদি দোকানে চাল কিনতে আসা ক্রেতা তানজিনা রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চালের দাম আকাশচুম্বী। তিনি উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, তেল ও চালের দামে অস্থিরতা কাটবে কখন?

এমন প্রশ্ন শুনে পাশে থাকা আরেক ক্রেতা বলেন, সরকারের উচিত এখনই ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। না হলে রোজায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য চলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারী ও খুচরা বাজারে। তবে মিলাররা দাবি করেছেন, ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে।

আশার কথা, শীতের শেষ সময়ে এসেও সবজির বাজারে স্বস্তি আছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় চট্টগ্রামে এখন অনেকটাই স্থিতিশীল সবজির বাজার। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগম, লাউসহ অনেক সবজির দামই এখন ক্রেতাদের হাতের নাগালে। সস্তায় মিলছে গোল আলু।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে লম্বা বেগুন কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও ভালো মানের গোল বেগুন ৪০ টাকার মধ্যেই কিনতে পাচ্ছে ক্রেতারা। এক কেজি আলু পাচ্ছে ২০ টাকায়। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। টমেটো পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায়। দেশি শসা ৪০ টাকা এবং হাইব্রিড শসার কেজি ৩০ টাকা। ৬০ টাকা কেজি ধনেপাতার।

তাছাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে ফুলকপি, ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বাঁধাকপি কিনতে পারছে ক্রেতারা। এছাড়াও শিম ৩০-৪০ টাকা, বিচিসহ শিম ৫০-৬০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, মুলা ২৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি বাজারে। ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যেই মিলছে বিভিন্ন শাঁকের আঁটি।

চাক্তাই বাজরে সবজি কিনতে আসা রহিম মিয়া নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানিয়েছেন, সবজির এখন দাম কমায় বাজারে আসতে তাদের স্বস্তি ফিরে এসেছে। একসময় যেখানে অল্প পরিমাণে সবজি কিনতে হতো, এখন সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বেশি পরিমাণে কেনা সম্ভব হচ্ছে।

আগের দামে গরু-খাসির মাংস, স্থিতিশীল মাছের দর। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগীর দাম। আগের সপ্তাহে বাজারগুলোতে ১৭০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। সোনালী ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৮০ থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে পেঁয়াজের বাজারেও। বর্তমানে কেজিতে ৫ টাকা কমে খুচরায় প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM