আয়নাঘর ঘুরে এসে যা লিখলেন আবদুল্লাহিল আমান আযমী

অনলাইন ডেস্ক

গণমাধ্যম ও কয়েকজন ভুক্তভোগীকে নিয়ে গতকাল আয়নাঘর নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অবস্থিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেন সরকারপ্রধান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী, যিনি আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে দীর্ঘদিন আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। গতকাল গোপন এই বন্দিশালা পরিদর্শন শেষে ফেসবুকে সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এর পাশাপাশি নির্যাতনের আলামত মুছতে আয়নাঘরে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম আযমপুত্র।

- Advertisement -

আমান আযমীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো

- Advertisement -google news follower

‘আজ সকালে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা কচুক্ষেতে অবস্থিত ডিজিএফআই এর আয়নাঘর পরিদর্শনে যান। ইতোমধ্যেই আপনারা নিশ্চয়ই তা দেখেছেন। এই পরিদর্শনের সময় তিনি আমাকেও সাথে নিয়ে যাওয়ায় উনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গণমাধ্যমে আমি একটি বিবৃতি পাঠিয়েছি। আপনাদের সাথে তা শেয়ার করছি। আয়নাঘর পরিদর্শনে আমাকে সাথে নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ব্রিগে. জেনারেল (অব.) আযমী

আজ, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বহুল প্রতিক্ষিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। আমাকে উনার সফরসঙ্গী হিসেবে নেয়ায় আমি উনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বলতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশে তো বটেই, সম্ভবতঃ সমগ্র পৃথিবীতে এ ধরণের ঘটনা নজিরবিহীন যে একজন সরকার প্রধান তার পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদ জালেম সরকারের জুলুমে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মযলুমকে সাথে নিয়ে নির্যাতনস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন। পৃথিবীর সকল শাসকদের জন্য এটা একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

- Advertisement -islamibank

দীর্ঘ ৮ বছর তথাকথিত আয়নাঘরে আটক থাকায় ধীরে ধীরে সেই স্থাপনার বিভিন্ন সেল, ইন্টারোগেশন রুম, সুপারভাইজারদের কক্ষসহ সেই স্থাপনার বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য আমার জানার সুযোগ হয়েছিল। আজকের এই পরিদর্শনের ফলে আমি সরেজমিনে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টাসহ চারজন উপদেষ্টা, গুম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরসহ গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গকে সরেজমিনে অনেক কিছু বিস্তারিত অবহিত করার সুযোগ পাই। ফ্যাসিবাদ সরকারের নির্দেশে একটি সরকারি বাহিনী মানুষের সাথে কত নির্মম হতে পারে, কতটা অমানবিক হতে পারে এবং নির্যাতনের মাত্রা কতটা জঘন্য হতে পারে এসব বিস্তারিত জেনে উনারা সকলেই অত্যন্ত মর্মাহত হন। এ ধরণের একটি পরিদর্শন ভবিষ্যতে দেশকে ফ্যসিবাদমুক্ত রাখতে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশা পোষণ করি।

এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, আমি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি ইতোমধ্যেই ডিজিএফআই এর আয়নাঘরের অনেক পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে যাতে করে নির্যাতনের মাত্রার আলামত সঠিকভাবে বুঝা না যায়। উদাহরণস্বরূপ, দরজার গ্রিলের কপাট এবং স্টিলের দরজা খুলে কাঠের দরজা লাগানো হয়েছে, জানালার গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে, দরজা ও জানালার কাঁচের চার স্তর কালো রং এর আস্তর মুছে কাঁচ পরিষ্কার ও স্বচ্ছ করে ফেলা হয়েছে, দেয়াল ভেঙে ভেন্টিলেটার বানানো হয়েছে, ছোট দুই রুমের মাঝের দেয়াল ভেঙে রুমের সাইজ বড় দেখানো হয়েছে, যেই কক্ষে নির্যাতন করা হতো সেই কক্ষে নির্যাতন করার যত রকমের আলামত ছিল সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে ইত্যাদি। এই অপকর্ম যারা করেছে তারা নিঃসন্দেহে অপরাধীদের দোষ ধামাচাপা দেয়ার জন্যই এই কাজ করেছে। অপরাধীদের অপরাধের মাত্রা কম দেখিয়ে তাদের বাঁচানোর বা শাস্তি লঘু করার চেষ্টার সাথে কারা জড়িত তা অনুসন্ধান করে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার জন্য আমি সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

আমি আরও উল্লেখ করতে চাই যে, এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও তারা আজ পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় আমি অত্যন্ত বিস্মিত। বলা বাহুল্য, প্রভাবশালী এ সকল অপরাধী মুক্ত থাকায় আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও অত্যন্ত শঙ্কিত বোধ করছি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। “জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড” কথাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সংশিষ্ট সকলকেই দ্রুত গ্রেফতার করে সুবিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমিসহ সারাদেশে যত মানুষ গুম-খুনসহ আরো যত রকমের জুলুমের শিকার হয়েছেন সকল অপরাধের দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করে আমাদের ভোগান্তি কিছুটা লাঘব করার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM