প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শীঘ্রই শুরু হচ্ছে নির্মাণ কাজ

কালুরঘাটে নতুন সেতু-এখন স্বপ্ন নয়,বাস্তবায়নের পথে!

প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিবেদন :

রাজীব সেন প্রিন্স : দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাটে নতুন রেল–কাম–সড়ক সেতুর নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

- Advertisement -

নানা জটিলতা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে অবশেষে স্বপ্নের সেতুটির নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

- Advertisement -google news follower

সড়ক ও রেলের স্ট্যান্ডার্ড ডাবল লাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১,৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি গত বছরের অক্টোবর মাসে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৪,৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ৭,১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা আসবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটিজ (ইডিপিএফ), কোরিয়া থেকে।

- Advertisement -islamibank

প্রকল্প অনুযায়ী ৬০ ফুট প্রশস্ত এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১১ কিলোমিটার। তবে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার। উচ্চতা ধরা হয়েছে বর্ষাকালে পানির সর্বোচ্চ লেভেল থেকে ১২ মিটার। উচ্চতার সাথে লেভেল ঠিক রাখার জন্য উভয়পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার করে ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংযুক্ত থাকছে এই প্রকল্পের সাথে।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আবুল কালাম চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বর্তমান সেতু থেকে ৭০ মিটার উজানে কোরিয়ার আর্থিক সহায়তায় কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ প্রকল্প চুড়ান্ত হয়েছে।

রেল চলাচলের জন্য ৩০ ফুটের মধ্যে ডাবল লাইন এবং সড়ক পরিবহন চলাচলের জন্য ৩০ ফুটের ডাবললাইন নির্মাণ করা হবে।

মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে আরো থাকছে ৬.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২.৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১.৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।

তিনি আরও জানান, ডিটেইল ডিজাইন ফাইনালের কাজ চলছে। এরজন্য ১৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য ২৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ হলে খুব শীঘ্রই টেন্ডার আহবান করা হবে।

টেন্ডারে শুধুমাত্র কোরিয়ান ঠিকাদার বা জয়েন্ট ভেঞ্চারের (জেভি) মাধ্যমে অন্যরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। সবঠিক থাকলে ২০৩০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতুটি পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় অগ্রধিকার ভিত্তিতে সরকার এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ নিশ্চিত এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগের সুযোগ তৈরি হবে।

কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে।

আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং আন্তআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে।

সোমবার দুপুরে কালুরঘাট সেতু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শণ করে দেখো গেছে, বর্তমানে পুরানো কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারে না।

বর্তমান সেতুটি একমূখী হওয়ায় সড়ক পথের যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকারে পৌছেছে। জ্যামের কারনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করতে হয় গাড়িতে বসে। একদিকে যেমন ভোগান্তি অন্যদিকে সময় অপচয়।

তাছাড়া বর্তমানে এই সেতুতে ভারী যনি চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। স্থানীয়রা প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষাকালে ঘাটে পানি ওঠে দুর্ভোগের মাত্রা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।

এর আগে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর স্থলে আরেকটি নতুন রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা।

সরকারের পক্ষ থেকে নতুন সেতু নির্মাণে বারংবার উদ্দ্যেগ নেয়া হলেও নানা জটিলতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যেতো।

এর মধ্যে পুরনো সেতুটি সংস্কার করে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালুর মাধ্যমে ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। তাছাড়া মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হবে শীঘ্রই।

অবশেষে অন্তবর্তী সরকারের সুদৃষ্টির ফলে নতুন রেল–কাম–সড়ক সেতুর নির্মাণ কাজ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গেল বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতু। সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত সেতুর কাজ শুরু হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা মনে করেন, বিদ্যমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ কাজের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে নির্বিঘ্নে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তাছাড়া বর্তমানে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমের অন্যতম চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে নির্বিঘ্ন রেল যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নতুন সেতুটি নির্মিত হলে, এই অঞ্চলের বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত কল-কারখানার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহন করতে সহজ হবে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ