বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর এবং দক্ষিণে ‘একপাক্ষিক’ কমিটি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়করা। তাদের দাবি— ২৪’র স্পিরিটের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিতে ব্যবসায়ী, নারী হেনস্তায় অভিযুক্ত এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে। তাই এ কমিটি অবাঞ্চিত ঘোষণার পাশাপাশি পদত্যাগ করার কথাও জানান তারা। কতজন পদত্যাগ করেছেন সেটি নির্দিষ্ট করে জানাননি তারা। তবে তারা জানিয়েছেন, অন্তত ৫০ থেকে ১০০ জন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

- Advertisement -

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকায় থাকা যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করে কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

- Advertisement -google news follower

আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়করা। এ সময় তিন দফা দাবি জানান তারা। তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে অবরোধ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সমন্বয়করা বলেন, ‘যারা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেনি এবং সম্মুখ সারিতে ছিলেন না তাদেরই কমিটির প্রধান পদে রাখা হয়েছে। অথচ যারা চট্টগ্রামে আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলেন তাদের মাইনাস করেই এ কমিটি দেওয়া হয়। আন্দোলনের সময় না থেকে যারা গত ৬ মাসে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে তাদেরই স্থান দিয়েছে কেন্দ্র।’

- Advertisement -islamibank

কেন্দ্রে যাদের বিরুদ্ধে নারী হেনস্তার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘কেন্দ্রের কাছে চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নারী হেনস্তা এবং কিশোর গ্যাং নিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যারা নারী হেনস্তা এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তাদের রেখেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সনাতনী ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের স্থান দেওয়া হয়নি। নারী সম্মুখ যোদ্ধাদের মধ্যে যারা সম্মুখ সারিতে ছিল তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।’

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় কেন্দ্র থেকে ঘোষিত একটা সমন্বয়ক তালিকা ছিল। কেন্দ্র থেকে এসে চট্টগ্রামের কোনো সমন্বয়কের কাছে আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে একবারের জন্য জানতে চাওয়া হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের সময় কেন্দ্র ঘোষিত চট্টগ্রামে যারা সমন্বয়ক হিসেবে ছিলাম এবং নতুন কমিটিতে যাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। একইসঙ্গে নতুন কমিটিতে আমাদের যে যে পদ দেওয়া হয়েছে; সেই পদ থেকে পদত্যাগ করছি’ —যোগ করেন সমন্বয়করা।

‘বিচার কার্যক্রম এবং আহতদের নিয়ে যারা কাজ করেছে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি’ জানিয়ে তারা আরো বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সবচেয়ে বেশি কাজ করার জায়গাটা ছিল আহত এবং ফ্যাসিস্টলীগের বিচার কার্যক্রম। অথচ বিচার কার্যক্রম ও আহতদের নিয়ে যারা কাজ করেছিল; তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। গত কয়েকদিন আগে টাইব্যুনালে চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক এমপি ফজল করিম চৌধুরীকে তোলা হয়। এটার জন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যারা কাজ করেছিল তাদের কাউকে এ কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যারা চাঁদাবাজি করেছে, চাটুকারিতা করেছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে।

ডট গ্যাংয়ের সদস্যরাই ‘চট্টগ্রাম মহানগর’র নতুন কমিটির আহ্বায়ক-সদস্য সচিব

তারা আরো বলেন, ‘ষোলশহরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের টর্চার সেল ছিল। কয়েকজন সমন্বয়ক ৫ আগস্ট পরবর্তী সেই টর্চার সেল চালু করে নেখানে মানুষকে নির্যাতন করে। আর তাদেরকেই এখন করা হয়েছে কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব। ডট গ্যাং— ছাত্রলীগের একটা ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘চট্টগ্রাম মহানগর’র নতুন কমিটির আহ্বায়ক রিজাউর রহমান এবং সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সেই ডট গ্যাংটি পরিচালিত হচ্ছে। এ নিয়ে কেন্দ্রের প্রত্যেককে অভিযোগ করা হয়েছিল। তখন তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন— তদন্ত করা হবে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অথচ ৬ মাসেও সেই তদন্ত কমিটি বা তদন্ত হয়নি। উল্টো যারা অভিযুক্ত তাদেরকেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। আর তাদের কমিটির মূল পদে রেখে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে।’

‘আজ বীর চট্টলা থেকে আমরা ঘোষণা দিতে চাই— এই যে কমিটি ঘোষণা হয়েছে সেই কমিটির জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক থেকে অবশ্যই হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাই দায়ী। তাই এ কমিটি যত দ্রুত বাতিল করার আল্টিমেটার দিচ্ছি। যদি কোনো কারণে এ কমিটি বাতিল না করে উল্টো তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়; তাহলে আমরা হাসনাত আব্দুল্লাহকে বীর চট্টলায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করবো’ —যোগ করেন তারা।

বীরদের মূল্যায়ন করতে না পারলে রাফি চট্টগ্রাম ছেড়ে নেত্রকোনায় চলে যাক—

খান তালাত মাহমুদ রাফি ফেসবুকে নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তাই এ বিকৃত কমিটি গঠনে তাঁর ‘দায়’ আছে বলে মন্তব্য করেন সমন্বয়করা। তারা বলেন, ‘রাফি বা রাসেল যেই হোক; আমরা যখন চট্টগ্রামের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় তখন আমাদের একটা গ্রুপ ছিল। সেই গ্রুপে তারাসহ আলোচনার মাধ্যমেই চট্টগ্রামে সব অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করতাম। তবে আমরা জানতে পেরেছি— কেন্দ্রীয় নির্বাহীর সদস্য হওয়ার পর থেকে রাসেল আহমেদ এ সম্পর্কে অবগত নন, তাকে জানানো হয়নি। কিন্তু রাফি যেহেতু অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিয়েছে; তাকে বলতে চাই— তোমরা যদি জুলাই আন্দোলনের সময় সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পার। বিশেষ করে রাফিকে বলবো, তুমি চট্টগ্রামের পথঘাট চিনতে না। এখানে চট্টগ্রামের যারা ছিল তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তোমরা বাস্তবায়ন করতে। তার মানে আমরা সকলে মিলে বাস্তবায়ন করেছি। তাহলে কোন দুঃসাহস দেখিয়ে কাদের সঙ্গে আলোচনা করে তোমরা এ রকম প্রহসনের বিকৃত কমিটি ঘোষণা করতে পারো।’

‘চট্টগ্রামের স্থানীয়দের অবমূল্যায়ন করলে রাফি-হাসনাত আব্দুল্লাহ যেই হোক পাত্তা দেওয়া হবে না’ মন্তব্য করে তারা বলেন, ‘রাফিকে সবকিছুর জবাব দিতে হবে। আর সে যদি বীর চট্টলার বীরদের সম্মান দিতে না পারে তাহলে তাঁর বাড়ি নেত্রকোনায় ফিরে যাক। চট্টগ্রামে এসে যদি কেউ চট্টগ্রামের স্থানীয়, আহত, মূল আন্দোলনকারী এবং নারীদের কাউকে অবমূল্যায়ন করে। তাহলে সে রাফি, হাসনাত আব্দুল্লাহ বা যেই হোক তাদের পাত্তা দেওয়ার সময় আমাদের নেই।’

দাবি না মানলে অবরোধ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি—

সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি জানানো হয়। এসব দাবি না মানলে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি এসব দাবি সময়ের মধ্যে না মানলে তার পরিপ্রেক্ষিতে যা কিছুই হবে সেসবের ‘দায়ভার’ হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিতে হবে। একইসঙ্গে রাফিকেও এর দায় নিতে হবে।

তিন দফা দাবিগুলো হলো :

► বিকেল ৩টার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর এবং দক্ষিণের কমিটি বাতিল করতে হবে। মূল আন্দোলনকারীদের নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করতে হবে।

► আগামী তিনদিনের মধ্যে কমিটি গঠনের আগে অভিযুক্ত সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

► ব্যক্তির পছন্দে গঠিত কমিটিসমূহ গঠনের সঙ্গে জড়িত সকলের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ