বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণে নব গঠিত তিন কমিটিকে প্রহসনের কমিটি হিসেবে অভিহিত করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা, সনাতন ও অন্য ধর্মের কোন সদস্যকে কমিটিতে না রাখা এবং নারী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করাসহ বিভিন্ন কারণে কমিটিগুলো অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্ররা জানান, চট্টগ্রামের তিন কমিটিতেই ২৪শের স্পিরিটকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
প্রকৃত আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে নারী হেনস্তায় অভিযুক্ত, কিশোর গ্যাং সদস্য ও ব্যবসায়ীদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেলের কাছ থেকে কোনো পরামর্শও নেয়া হয়নি। এর দায়ভার সম্পূর্ণ কেন্দ্রকে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়ে কমিটি বাতিল, অভিযুক্ত বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ও নতুন কমিটি যারা করেছে তাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ তিন দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।
এরপর তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শেষে বেলা সোয়া একটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জামালখান, আসকার দীঘির পাড় ও কাজীর দেউড়ি হয়ে টাইগারপাস মোড়ের দিকে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের টাইগারপাসমুখী সড়কে বসে অবরোধ করেন তাঁরা।
ছাত্রদের অপর একটি টিম লালখান বাজারের সড়কের একপাশ ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ শুরু করে। এর প্রভাবে লালখান বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে যানজট দেখা যায়।
আগাম কোন কর্মসূচি ছাড়াই হঠাৎ করে অবরোধ পালন করায় ভোগান্তিকে পড়ে সাধারণ মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজ ফেরত শিক্ষার্থীরাও। খবর পেয়ে বিভিন্ন থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম জানান, পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে ডাইভারশেন দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি অররোধকারীদের সাথে কথা বলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে।
তবে অবরোধকারীরা জানিয়েছেন, কমিটি বাতিল না হলে তাঁরা সড়ক ছাড়বেন না। কেন্দ্রের সাথে কথা বলার পর তারা সড়ক ছাড়বে।
এর আগে প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের একাংশের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা জোবায়রুল আলম, নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা চৌধুরী সিয়াম ইলাহি ও সংগঠক আবু বাছির নাঈম।
জোবায়রুল আলম মানিক জানান, বিতর্কিত একটি কমিটি। দক্ষিণে যাকে আহবায়ক করা হয়েছে তাকে কখনো মিছিল মিটিংয়ে দেখা যায়নি। হুট করে তার নাম ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি আমরা মানি না।
সমন্বয়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহি বলেন, ‘এই কমিটির মাধ্যমে আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে। যারা রক্ত দিয়েছে, যারা আহত হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের কমিটিতে বসানো হয়েছে।’‘আমরা তিন কমিটি থেকে অর্ধশতেরও বেশি সদস্য পদত্যাগ করেছি এবং তিন দফা বেঁধে দিয়েছি। এরপর অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যাবো আমরা।
আব্দুল বাছির নাঈম বলেন, ‘বিচার ও আহতদের পাশে থাকা কর্মীদের মূল্যায়ন না করে যারা চাঁদাবাজি করেছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে, তাদেরই কমিটিতে বসানো হয়েছে। এটি চট্টগ্রামের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’
তিন দফা দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘বীর চট্টলায় অন্যায় কমিটি টিকবে না। আন্দোলনকারীদের বঞ্চিত করলে আমরা রাজপথে নামবো। ‘যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে চট্টগ্রামে কঠোর আন্দোলন হবে। এর দায়ভার হাসনাত আব্দুল্লাহকেই নিতে হবে।
তাদের দাবিগুলো হলো-বিকেল ৩টার মধ্যে নতুন কমিটি বাতিল করে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করতে হবে। তিন দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। কমিটি গঠনের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর আগে সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় কমিটি আগামী ছয় মাসের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর ৩১৫, জেলা উত্তরে ১১২, জেলা দক্ষিণে ৩২৭ সহ মোট ৭৫৪ সদস্যবিশিষ্ট তিনটি কমিটির অনুমোদন দেয়। এরপর থেকেই নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
এদিকে আরেকটি পক্ষ বিপ্লব উদ্যানে জড়ো হয়েছে। সেখানে তারা গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে নতুন তিন কমিটির কিছু নেতা-কর্মী সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে ভিন্ন এক হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামে উদ্ভুত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে করা না হলে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সহযোদ্ধাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে যেতে বাধ্য হবো।
জেএন/পিআর