এটুআই প্রকল্পের অর্থ লোপাটে জয়-পলকের ‘সংশ্লিষ্টতা’

অনলাইন ডেস্ক

• অকারণে প্রকল্পের অর্থ ও ব্যয় বৃদ্ধি
• একই ঠিকাদার বারবার কাজ পেয়েছে
• ১৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে
• জয়-পলকের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে

- Advertisement -

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের যোগসাজশে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় কয়েকশ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এটুআই অফিসে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৮৫৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে রাষ্ট্রীয় অর্থের আত্মসাৎ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে তারা।

- Advertisement -google news follower

দুদকের অভিযান
৮৫৫ কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে অভিযান চালায় দুদক। সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় দুদকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

অভিযান চলাকালে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনে এটুআই প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ১৫০ এর বেশি টেন্ডার খতিয়ে দেখা হয়েছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা (পিপিআর) লঙ্ঘন করে ওই টেন্ডারগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া, স্পেসিফিক/লজিক্যাল জাস্টিফিকেশন ছাড়া কার্যাদেশের ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। যার মাধ্যমে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে থাকতে পারে। এটুআই ২০১৯ সালে ই-পেমেন্ট সার্ভিস ‘একপে’ চালু করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তাদের অনুমোদন ছাড়াই চালু হয় ‘একপে’। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

- Advertisement -islamibank

এটুআই সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। এটুআই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ৪৮৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ধরা হলেও পরবর্তী সময় এর ব্যয় দাঁড়ায় ৮৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অভিযানকালে প্রাপ্ত অনিয়মগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে টিম সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে।

রাজু আহমেদ বলেন, ‘দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানে আমরা সেখানে যাই। প্রকিউরমেন্টে আমরা কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি। নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। সেগুলো যাচাই করে রিপোর্ট দেবো। সেখানে একজন পিডির বক্তব্য গ্রহণ করেছি। প্রায় ১৫০টির বেশি প্রকিউরমেন্ট ছিল। সেগুলোর যতুটুকু যতসম্ভব দেখেছি। আমাদের কাছে কিছু অনিয়ম মনে হয়েছে।’

এটুআই হেড অব প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট আব্দুল্লাহ আল ফাহিম বলেন, এরইমধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনিয়মের পেছনে সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকের সম্পৃক্ততাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা হলেন, ইউএনডিপির নিয়োগকৃত প্রকল্প পরামর্শক আনীর চৌধুরী, ই-গভর্মেন্ট অ্যানালিস্ট হিসেবে ফরহাদ জাহিদ শেখ, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট মো. মাজেদুল ইসলাম, প্রজেক্ট অ্যানালিস্ট (এইচডি মিডিয়া) পূরবী মতিন, ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মানিক মাহমুদ, রিসোর্স মোবিলাইজেশন স্পেশালিস্ট মো. নাসের মিয়া, ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস স্পেশালিস্ট তহুরুল হাসান টুটুল, সলিউশন আর্কিটেকচার স্পেশালিস্ট রেজওয়ানুল হক জামী এবং টেকনোলজি অ্যানালিস্ট মো. হাফিজুর রহমান।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, রেকর্ডপত্রগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০০৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১৮ সালে এটুআই প্রোগ্রামকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে নেওয়া হয়। পরে ২০২০ সালে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের নাম পরিবর্তন করে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) রাখা হয়।

প্রকল্পটি থেকে আরও জানা যায়, পাঁচটি উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্প শুরু হয় যার মধ্যে ছিল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনকে দ্রুততর করা, সরকারি সেবাগুলো ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সময়, খরচ ও যাতায়াত কমিয়ে সুশাসনে সততার পরিবেশ সৃষ্টিতে সহযোগিতা প্রদান, সরকারের মধ্যে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলা, ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম তৈরিতে সহায়তা সহায়তা প্রদান করা।

প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ
প্রকল্পটিতে ২০১৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনজন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। শুরুতে প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সরকারের ব্যয় ছিল ৪০৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর সহায়তা তহবিল থেকে আসার কথা ৮১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু পরে প্রাক্কলিত ব্যয় সংশোধন করে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৮৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের ব্যয় ৪০৩ কোটি ৬৫ লাখ থেকে বেড়ে ৫৫৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হয়। আর সহায়তা থেকে আসা ব্যয় ৮১ কোটি ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ৩০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দাঁড়ায়।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। গত বছরের ৩১ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ প্রকল্পের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে সেই কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকল্পে নিযুক্ত একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। সে অনুযায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রকল্পের ৮৫৫ কোটি টাকা দুর্নীতির খবরটি সঠিক নয় বলে বিজ্ঞপ্তি

এদিকে, অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পের ৮৫৫ কোটি টাকা দুর্নীতির খবরটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এটুআই কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত সংবাদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনুর রশিদ ভূঁইয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM