চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানা এলাকায় বিকাশ এজেন্ট বিজয় হত্যার ঘটনায় এক ঠিকাদারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে নাছির উদ্দিন নামে অপর এক আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরার আদালত এই রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম আব্দুর রহমান (৪০)। তিনি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বলেন, ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণে পাহাড়তলী থানার বিজয় কুমার বিশ্বাস হত্যা মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামি আব্দুর রহমানকে ৩০২ ধারার মৃত্যুদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ২০১ ধারায় আব্দুর রহমানকে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামি মো. নাছির উদ্দিনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ের সময় আব্দুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজা পরোয়ানা মূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর বিকেলে নগরের পাহাড়তলী থানার অলঙ্কার মোড় সংলগ্ন আলিফ গলি এলাকা থেকে বিজয় কুমার বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির লাশ ককশিট ও পেপার দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
ইপিজেড থানার নেভি গেইট ওয়েল ফেয়ার মার্কেটের নিচতলায় চাঁদনী এন্টারপ্রাইজ ও এন্ড গিফট শপ নামের একটি দোকান ছিল তার।
ওই ঘটনার এক সপ্তাহ বাদে ইপিজেড থানার সেলার্স কলোনি ২ নম্বর গেট সংলগ্ন রংধনু স্কুল গলির বাসা থেকে আব্দুর রহমানকে (৪৪) গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আব্দুর রহমান তখন ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ইপিজেড থানার নেভি ওয়েল ফেয়ার মার্কেটে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।
একই মার্কেটের দোকান হওয়ায় আব্দুর রহমান ও বিজয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। এজন্য প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা লাভে দেড় লাখ টাকা আব্দুর রহমানকে ঋণ হিসেবে দিয়েছিল বিজয়।
কিন্তু আব্দুর রহমান টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দুজনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছিল। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর আব্দুর রহমান টাকা পরিশোধের কথা বলে বিজয়কে তার প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেয়। সেখানে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আব্দুর রহমান ধাক্কা দিলে বিজয় মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
তখন গলায় ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে বিজয়কে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে বিজয়ের লাশ বস্তার ভেতরে করে ককশিট ও পেপার মুড়িয়ে অলংকার মোড় সংলগ্ন আলিফ গলিতে ফেলে দিয়ে আসে আব্দুর রহমান ও তার কর্মচারী নাছির।
পরে বিজয়ের ভাই সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস বাদি হয়ে নগরের পাহাড়তলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দিয়েছেন।
জেএন/পিআর