উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচি শুরুর পর প্রায় সাড়ে আট বছর পেরিয়ে গেছে।
কিন্তু এখনো পাঁচ কোটির বেশি ভোটার স্মার্টকার্ড পাননি। কবে তারা এই কার্ড পাবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হালনাগাদ অনুযায়ী দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন।
এদের মধ্যে ছয় কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৯ জন স্মার্টকার্ড হাতে পেয়েছেন। পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ৮১১ জন এখনো এই কার্ডের জন্য অপেক্ষা করছেন।
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। সে হিসাবে আট বছর চার মাস পেরিয়ে গেছে। দিন দিন ভোটার বাড়লেও সে অনুপাতে কার্ড বিতরণ এগোয়নি। এই দীর্ঘসূত্রতার পেছনে আর্থিক সংকটসহ নানা কারণকে দায়ী করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে আইডিইএ (স্মার্টকার্ড) প্রকল্পটি হাতে নেয় কমিশন। তারপর দীর্ঘ চার বছর নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে স্মার্টকার্ড তৈরির দিকে এগোয় সংস্থাটি।
এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ওই সময়ের ৯ কোটি ভোটারের জন্য নয় কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস।
কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লেখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে অবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানন, অবার্থার ১ দশমিক ৫১ ডলার দরে ৭ কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছিল। সেই মোতাবেক পূর্বের ১ কোটি ২৭ লাখ নাগরিকের কার্ড ঘাটতি ছিল। এই ক’বছরে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন।
সব মিলিয়ে আরো প্রায় সাড়ে চার কোটির মতো ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য সংযুক্ত করে বিতরণে যেতে হবে। এজন্য ইতিমধ্যে আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোট স্মার্টকার্ড প্রিন্ট হয়েছে আট কোটি ৮৬ লাখ ৯২ হাজার ২৬৮টি। বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে ছয় কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৯টি কার্ড। বিতরণের অপেক্ষায় আছে এক কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ৯১৯টি কার্ড।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এনআইডির (স্মার্টকার্ড) যে ব্লাংক কার্ড, এটা একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এখন দাপ্তরিক কাজ এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বর্তমানে স্মার্টকার্ডের পাশপাশি নাগরিকদের হাতে লেমিনেটিং করা কাগজের এনআইডি দিচ্ছে ইসি। তবে বিভিন্ন সেবা নিতে গেলে কাগজের কার্ড নিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। এক্ষেত্রে স্মার্টকার্ড ছাড়া অন্য কোনো কার্ড আমলে নিতে চায় না অনেক প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে এনআইডি মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান থাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম সীমিত হয়ে আছে।
তবে এই কার্যক্রম শেষ হলেই হাতে থাকা কার্ডগুলো দ্রুত বিতরণ করা হবে।
জেএন/পিআর