ইতালিতে মানব পাচারের অভিযোগে হাবিব ও নজরুল নামে দুই বাংলাদেশিকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এই পাচার চক্র প্রতিজনের কাছ থেকে প্রায় ১১ হাজার ইউরো (প্রায় ১৫ লাখ টাকা) আদায় করত বলে জানা গেছে।
দেশটির মূলধারার গণমাধ্যম ‘লা রিপfবলিকা’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়া হয়ে বাংলাদেশি তরুণদের ইতালিতে পাচারের সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে আটককৃতদের নাম প্রকাশ না করলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাবি, তারা দুজন সহোদরের নাম হাবিব ও নজরুল, বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরনসনা গ্রামে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি নজরুল ছুটি শেষে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ফিরলে রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে আগে থেকে ওত পেতে থাকা ইতালির অ্যান্টি-মাফিয়া ইউনিটের প্রায় শতাধিক সদস্য তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাকে নিতে আসা তার ভাই হাবিবকেও আটক করা হয়।
২০২২ সালে ইতালির আদালতে নজরুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে আসা কয়েকজন বাংলাদেশি।
তাদের অভিযোগ, ২০২০ সাল থেকে নজরুল একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় মানব পাচার করতেন।
পদ্ধতিটি ছিল সুপরিকল্পিত— প্রথমে বাংলাদেশি তরুণদের দুবাই পাঠানো হতো। সেখান থেকে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার বেনগাজিতে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে একটি মাফিয়া চক্রের কাছে তাদের জিম্মি রাখা হতো।
এদিকে নজরুলের ভাই হাবিব বাংলাদেশে অবস্থান করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতেন। নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধের পর লিবিয়ার মাফিয়াদের সহায়তায় সমুদ্রপথে ইতালি পাঠানো হতো।
এই পাচার চক্র প্রতিজনের কাছ থেকে প্রায় ১১ হাজার ইউরো (প্রায় ১৫ লাখ টাকা) আদায় করত বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি মাদারীপুরের আরও পাঁচ যুবক ইতালির আদালতে হাজির হয়ে নজরুল ও হাবিবের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য দেন।
এরপরই ইতালির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং নজরুলের ইতালি ফেরার তথ্য নিশ্চিত হয়ে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করে।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ বিভাগের প্রথম সচিব আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, “আমরা ঘটনাটি শুনেছি, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাইনি।”
ইতালির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে এই পাচারচক্রের আর্থিক লেনদেন ও নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ শুরু করেছে। তদন্তের মাধ্যমে আরও নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেএন/পিআর