নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লাক মিয়া ও তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের ১২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী মো. মহসিন মোল্লার ব্যাংক হিসাবে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন পাওয়া গেছে। দুদক এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান লাক মিয়া ভিজিডি, ভিজিএফ, এলজিএসপি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ভূমি দখল ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। দুদক বলছে, এই অর্থ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী অবৈধ। সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লাক মিয়ার ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫১ টাকার সম্পদ রয়েছে, যার উৎস বৈধ নয়। তিনি এ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া ৪৯টি ব্যাংক হিসাবে চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ১৪ হতাজার ৩৭৬ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। দুদক বলছে, এটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: লাক মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম স্বামীর যোগসাজশে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ১৯৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ২৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা জমা এবং ২৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মোট ৪৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।
কর্মচারী মোহসিন মোল্লার সন্দেহজনক লেনদেন: লাক মিয়ার অধীনে কর্মরত ১২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী মো. মহসিন মোল্লা এনআরবি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও এম/এস এনআরবি ট্রেডার্সের মালিক। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ১০ হাজার ৩২২ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। দুদক তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার ১১টি ব্যাংক হিসাবে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জমা এবং ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য পাওয়া গেছে। মোট ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা স্থানান্তর ও রূপান্তর হয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আইরিন মালবিকা মুনশির বিরুদ্ধে পৃথক মামলা: টিপু মুনশির স্ত্রী আইরিন মালবিকা মুনশি ৪ কোটি ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৭৩০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে, যেখানে টিপু মুনশিকেও আসামি করা হয়েছে।
টিপু মুনশির মেয়েদের ব্যাংক হিসাবেও সন্দেহজনক লেনদেন: টিপু মুনশির মেয়ে তানিয়া অনন্যা মুনশি ও তৃষা মুনশির নামে একাধিক ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক এবং তাদের নামে থাকা শেয়ারের উৎস নিয়ে দুদক নতুন তদন্ত শুরু করেছে।
দুদক বলেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেএন/এমআর