আবারও উড়লো জুলহাসের বিমান, যমুনা পাড়ে মানুষের ঢল

অনলাইন ডেস্ক

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনার চরে আনুষ্ঠানিকভাবে উড্ডয়নের চার দিন পর আবারও আকাশে উড়লো তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের তৈরি করা বিমান। সকাল থেকে উপজেলার জাফরগঞ্জের চরে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। বিমান উড়ানো দেখার জন্য যমুনার চরে আসা এসব দর্শনার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।

- Advertisement -

রোববার (৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যমুনা নদীর বালুচরে জুলহাসের তৈরি আরসি বিমানটি উড্ডয়ন করে। এ সময় সকাল থেকেই জুলহাসের বিমানটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন।

- Advertisement -google news follower

এ সময় বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিমান উড্ডয়নের আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হেলিকপ্টার নিয়ে যমুনার চরে অবতরণ করেন তিনি। এর পর আলোচনা সভায় যোগ দেন।

জানা গেছে, জুলহাস মোল্লার (২৮) বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর তেওতা গ্রামে। জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লার গ্রামের বাড়ি ছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। নদী ভাঙনের কারণে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করছেন তারা। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম।

- Advertisement -islamibank

উপজেলার জিয়নপুরের বিকেএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তবে অর্থাভাবে আর পড়তে পারেননি। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান জুলহাস ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। অবসরে তিনি এই বিমান তৈরি করেন। গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদীর চরে নিজের তৈরি বিমানটি আকাশে সফলভাবে উড্ডয়ন করেন। ওই দিন জেলা প্রশাসক তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জুলহাসের জন্য আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। আজকে বঙ্গটেক নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয় জুলহাসকে।

টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে জুলহাসের বিমান উড়ানো দেখতে এসেছেন লোকমান রহমান। তিনি বলেন, ছেলে বোরহানকে নিয়ে জুলহাসের বিমান দেখতে এসেছি। ছেলে বোরহানের বয়স আট বছর। টিভিতে বিমানটি দেখার পর বায়না ধরেছে বিমানটি সামনে থেকে দেখবে। বিমানটি আবারো উড়ানো হবে এ খবর পাওয়ার পর ছেলের আবদার পূরণ করতে সকাল বেলা ছুটে এসেছি যমুনার পাড়ে। বিমানটি সামনে থেকে দেখতে পেরে আমার ছেলে খুবই খুশি।

দর্শনার্থী জুয়েল রানা বলেন, আমি মানিকগঞ্জ শহর থেকে এসেছি তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের তৈরি বিমান দেখতে। মানুষ ইচ্ছাশক্তি এবং চেষ্টা থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে। বই-পুস্তুকের জ্ঞানই শুধু মানুষকে সফল করে না, উচ্চশিক্ষিত না হয়েও আজকে জুলহাস বিমান তৈরি করে আকাশে উড্ডয়নে সফল হয়েছে। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

জুলহাস মোল্লা বলেন, তিন বছরের গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে বিমানটি তৈরি করতে। অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দিয়ে বিমানটির অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। পানির পাম্পের ‘সেভেন হর্স পাওয়ারের’ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। চার বছর চেষ্টার পরে আজকে আমি সফল হয়েছি। বিমানটি তৈরি করতে আমার এই চার বছরে সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে শুধু বিমান তৈরিতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এই বিমান মূলত পরীক্ষামূলকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরি করা হয়নি। তবে সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরি করা যেতে পারে। ৫০ ফুট ওপরে উড়তে পারে বিমানটি।

বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, জুলহাসের বিমানটি তৈরিতে যে গবেষণা হয়েছে তা কীভাবে আরো উন্নয়ন ঘটানো যায় সে বিষয়ে সবাই কাজ করবো। সেই সাথে তার একাডেমিক যে সকল রিসোর্স ও কারিগরি সহযোগিতা প্রয়োজন সে বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM