৭৫ বছর বয়সেও আইনজীবী হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা আবদুল হাইয়ের

দেশজুড়ে ডেস্ক :

জীবনের প্রায় ছয় দশক পার করেছেন কর্মজীবনে। তবুও থেমে থাকেননি শিক্ষার পথে।

- Advertisement -

আজ শুক্রবার বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৭৫ বছর বয়সী মো. আবদুল হাই মিয়া।

- Advertisement -google news follower

পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের কুলুনিয়া গ্রামের আবদুল হাই মিয়ার জীবনের গল্পটি শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগের এক বাস্তব উদাহরণ।

১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। এরপর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ায় আর পড়ালেখা এগোয়নি। জীবিকা হিসেবে বেছে নেন আইনজীবীর সহকারী পেশা।

- Advertisement -islamibank

টানা ৫৫ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন এ পেশায়। কিন্তু মনের ভেতর আইনজীবী হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা থেকেই গোপনে চালিয়ে যান পড়াশোনা।

২০০১ সালে ছোট মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন—উত্তীর্ণও হন। এরপর ২০১০ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১২ সালে ভর্তি হন পাবনার আমিন উদ্দিন আইন কলেজে। ২০১৯ সালে এলএলবি পাস করার পর আইনজীবী তালিকাভুক্তির আবেদন করেন। আজ সেই স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপ—বার কাউন্সিলের পরীক্ষা।

নিজের শিক্ষাযাত্রা নিয়ে আবদুল হাই মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। কর্মজীবনের শুরুতে ৫০ পয়সা হাজিরায় কাজ করতাম। এখন সেই সময় পেছনে ফেলে আমি শেষ বয়সে এসে বই হাতে তুলে নিয়েছি।

পরিবার আমাকে সহযোগিতা করেছে—স্ত্রী, দুই মেয়ে সবাই পাশে ছিল। দিনে কাজ, রাতে পড়াশোনা করেছি। এখন মনে হচ্ছে, আমি সার্থক।’

পরিবার ও প্রতিবেশীরাও আবদুল হাই মিয়ার এই প্রচেষ্টায় গর্বিত। স্ত্রী মোছা. রওশন আরা বলেন, ‘কষ্টের সংসার ছিল আমাদের। কিন্তু স্বামীকে কোনো দিন অনৈতিক পথে যেতে দেখিনি।

তিনি রাত জেগে পড়তেন, আমি তাকে সহায়তা করতাম। এখন তিনি আইনজীবী হবেন, এটা ভেবে আমি খুব আনন্দিত।’

ছোট মেয়ে সকিনা পারভীন বলেন, ‘আমি আর বাবা একসঙ্গে এইচএসসি পাস করি। আজ বাবার বড় স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এটা আমাদের সবার জন্যই গর্বের।’

আবদুল হাই মিয়ার দীর্ঘ কর্মজীবনে সহকর্মী হিসেবে থাকা আইনজীবী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তিনি সাদামাটা জীবনযাপন করেন, অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু জানেন। ইংরেজিতে ড্রাফটেও পারদর্শী।

তিনি বরাবরই একজন আদর্শ কর্মী ছিলেন। আজ তিনি নিজেই আইনজীবী হতে যাচ্ছেন—এটা সত্যিই অনুকরণীয় উদাহরণ।’

জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি কাজী আইয়ুব আলী বলেন, ‘আবদুল হাই মিয়া আমাদের গর্ব। তার সফলতা আমাদের প্রেরণা জোগায়।’

পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহামুদ খান বলেন, ‘প্রবীণ একজন সহকারী আইনজীবী হতে যাচ্ছেন, এটি বিরল একটি ঘটনা। তার এই সাহসিকতা অনেককেই নতুন করে পথ দেখাবে।’

উল্লেখ্য, আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষা আজ শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM