চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় ইসকনের সাবেক নেতা ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৫ মে) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন। শুনানিতে চিন্ময় দাস ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রোববার আলিফ হত্যা মামলা, পুলিশের কাজে বাধাদান, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলাসহ মোট চারটি মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। এরমধ্যে হত্যা মামলার শুনানি সোমবার হল।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পিপি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, সোমবার আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার শুনানি শেষে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া চারটি মামলার মধ্যে এটি একটি। অন্য তিনটি মামলা পুলিশ ও আইনজীবীদের ওপর হামলা, বিচারকাজে বাধা এবং আদালত এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।
এই তিন মামলার শুনানি হবে মঙ্গলবার (৬ মে)।বাকি তিন মামলার শুনানি মঙ্গলবার হবে। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে সরাসরি আদালতে হাজির না করে ভার্চুয়ালি হাজির করা হয়েছে জানালেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) রায়হানুল ওয়াজেদ।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন।
পরে এ মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সবশেষ গত বছরের ২৫ নভেম্বর এ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
পরদিন চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করে চিন্ময়ের অনুসারীরা।
তারা প্রিজন ভ্যান আটকে রেখে পুলিশকে বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
এ সময় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আদালত এলাকা থেকে লালদিঘী ও কোতোয়ালি থানা পর্যন্ত। ওই সহিংসতায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে চিন্ময় দাস ও তার অনুসারীদের ভূমিকা।
এর আগে গত বুধবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়কে স্থায়ী জামিন দেয় হাই কোর্ট। সেই জামিন স্থগিতের জন্য ওই দিনই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সেই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে রোববার শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকীর মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারিক কার্যক্রম দুপুরের পর স্থগিত রাখা হয়। তাই চিন্ময় দাসের বিষয়ে শুনানি আর হয়নি।
এরমধ্যেই আলিফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রোববার চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
সেখানে বলা হয়, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী হত্যা মামলার ঘটনায় জড়িত আছে মর্মে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে বিধায় আসামিকে উক্ত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো একান্ত প্রয়োজন।”
জানা গেছে, আলিফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত আসামি চন্দন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য ও রিপন দাশ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জেএন/পিআর