সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে কারা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে বরাবরের মতো এবারও রয়েছে কৌতূহল। সম্ভাব্য প্রার্থীরা চালিয়ে যাচ্ছেন তদবির, কেন্দ্রে চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। এবার চট্টগ্রামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে পুরানোদের পাশাপাশি নতুন মুখ কারা, তা জানার চেষ্টা করেছেন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রুবেল দাশ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শেষ হয়ে গেলেও সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। সংসদে মহিলা এমপিদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত থাকলেও চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ আছে তিনটি আসন। এই তিনটি পদের জন্য চট্টগ্রামে প্রায় এক ডজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে সরব রয়েছেন সংরক্ষিত আসনে নারী এমপি পদপ্রার্থীরা।
সূত্র মতে, নারী এমপি হতে ইচ্ছুকদের মধ্যে অনেকে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা গণভবনে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংরক্ষিত নারী এমপি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার উপযুক্তদের নাম চূড়ান্ত করবেন।
গেল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনজন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান, সাবেক চসিক কাউন্সিলর সাবিহা মুছা এবং ফিরোজা বেগম চিনু।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, গত সংসদগুলোতে সংরক্ষিত নারী এমপি পদে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা এবার দলের মনোনয়ন পাবেন না। শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকলে এই তিনজন একাদশ সংসদে থাকছেন না সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে এবার নতুন তিনজন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যকে পাবে চট্টগ্রামবাসী।
চট্টগ্রাম থেকে সংসদের সংরক্ষিত আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলেন সাবেক মহিলা এমপি চেমন আরা তৈয়ব, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার, সুচিন্তা বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জোবাইদা নার্গিস খান, সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী, রেহেনা কবির রানু ও আবিদা আজাদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার জয়নিউজকে বলেন, আমি ১৯৯০ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হই। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আছি। ১৯৯৫-৯৭ সাল পর্যন্ত লোহাগাড়া নুরুল আলম উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেছি।
তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে যখন জামায়াত-বিএনপি সরকার এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর স্টিম রোলার চালানো শুরু করে তখন রাজপথে থেকে সরকারের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলা ঘুরেছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
সুচিন্তা বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে নৌকার প্রার্থীদের সমর্থনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিজুয়্যালি প্রতিটি জনাকীর্ণ স্থানে বিএনপি জামায়াতের একশ দিনের হরতালে বর্বরতা এবং বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছি। এছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় দিনবদলের উন্নয়নের চিত্র প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরে নৌকার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছি।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন মক্তব-মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছি। আলেমদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একজন নারীর এই প্রচার কার্যক্রমের মূল্যায়ন আমি পাবো বলে বিশ্বাস রাখি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ জয়নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। জনগণের সেবার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও আমার সক্রিয় সম্পৃক্ততা আছে। আশা করি দল আমার কাজের মূল্যায়ন করে আমাকে মনোনয়ন দেবে।
প্রসঙ্গত, আইন প্রণয়নে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে সংবিধানে বিশেষ কোটা চালু করা হয়। সেই থেকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ থাকছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আরো ২৫ বছর নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বহাল রাখতে সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮ পাস করা হয়েছে।