- চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ প্রাথমিকভাবে সড়কটির রাস্তার মাথা থেকে রাউজান গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত দুটি প্যাকেজে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।এতে খরচ হবে ৫০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামে রোডস এন্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টের (আরএইচডি) সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, কার্পেটিং রাস্তার সাথে লাগোয়া রয়েছে শতশত গাছ, পিডিবির খাম্বা, রাখা হয়নি ওয়াকওয়ে, বাড়তে পারে দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে এমন অনিয়ম চোখে পড়েছে।
জানা যায়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে হাটহাজারীর মদুনাঘাট হয়ে রাউজানের গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত সড়কটির সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্তকরণের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রামের সড়ক বিভাগ।
রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত একটি প্যাকেজে ৫ কিলোমিটার সড়কের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এই প্যাকেজে নজুমিয়াহাট এলাকায় ২০০ মিটার সড়কের উভয় পাশে আরও ১৬ ফুট বেড়ে মোট রাস্তার প্রশস্ত হবে ৩৬ ফুট। আর বাকি রাস্তাটি ১০ ফুট বেড়ে হবে ৩০ ফুট।
উভয়পাশ মিলিয়ে প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত করার কথা রয়েছে। এটির উভয় পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে।
আরেকটি প্যাকেজে মদুনাঘাট থেকে গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
যেখানে বর্তমানে ১৯ থেকে ২০ ফুট রাস্তার উভয়পাশে ১০ ফুট (কম/বেশি) প্রশস্ত করে রাস্তাটি সাড়ে ৩০ ফুট করার কথা রয়েছে।
ঠিকাদার হিসেবে ২টি কাজই যৌথভাবে করছে আরএন ইয়াকুব আব্দুস সালাম । বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরএইচডির তথ্য অনুযায়ী এই কাজে বর্ধিত অংশের গভীরতা হবে ৮০০ মিলিমিটার বা ৩১ দশমিক ৫০ ইঞ্চি বা আড়াই ফুটের অধিক।
আর এর উপরে বাইন্ডার (কার্পেটিং) থাকবে বর্ধিত অংশে ৬০ মিমি (২.৩৬ ইঞ্চি) আবার পুরো সড়কে (বর্ধিত অংশসহ) ৪০ মিমি (১.৫৮ ইঞ্চি)। রাস্তার উভয়পাশে এক মিটার ওয়াকওয়ের জন্য সোল্ডার রাখার কথা।
সকল কাজে ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহারের বাধ্যবাদকতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নজুমিয়া হাট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নজুমিয়া হাটের পরে কাজ চলমান আছে। যেখানে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করছে। আবার গভীরতা কোথাও দেড় ফুট কোথাও ২ ফুটের মতো আছে।
তাছাড়া কিছু জায়গায় এমনভাবে কাজ করছে তা কার্পেটিং করা হলে গাছের গোড়া পর্যন্ত মুল সড়ক হয়ে যাবে। ওয়াকওয়ে বা সোল্ডার থাকার মতো জায়গা নেই। এভাবে কাজ শেষ করলে মানুষ চলাচলে সমস্যা হতে পারে এমনকি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবার কোথাও গাছ না কেটেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে। কাজ শেষ হওয়ার পরে এসব গাছ কাটা হলে রাস্তা আবারো নষ্ট হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়,রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫২ কিলোমিটার। এইটা চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সড়ক,এ সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে যাতায়াত রয়েছে।
ফলে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে।
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণের দাবি দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কাছাকাছি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় বাসের ধাক্কায় নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসাইন। আহত হন আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা চার দিন আন্দোলন করেন চুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীতকরণ, সড়ক বিভাজক স্থাপন, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে দাবি মানার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার শর্তে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দীন চৌধুরীর মোবাইলে কল ও বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। একাধিকবার অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎ চাইলেও ব্যস্ততার অযুহাতে সাক্ষাৎ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দীন নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষটি আমরা জানতে পেরেছি।
তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, এধরণের ইট আর ব্যবহার করবেনা বলে আমাদের জানিয়েছে।
অন্যান্য বিষয়গুলো নজরে রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মূল রাস্তার পরে একমিটার ওয়াকওয়ে থাকবে, গাছ কাটার কিছু আইনী জটিলতা ছিল যে কারনে একটু সময় লেগেছে।
গভীরতা বা কার্পেটিংয়ে চুরি করার কোন সুযোগ নেই, তারপরও যদি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার বা কোন অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে আমরা ঠিকাদরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
জেএন/পিআর