অবসরে বা বদলি হয়ে যান কাস্টমস কর্মকর্তা। কিন্তু সচল থাকে তাঁর আইডি। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন হয় না পাসওয়ার্ড। অভিযোগ রয়েছে, সেই সুযোগে বছরের পর বছর ধরে কর্মকর্তাদের সেই আইডিগুলো ব্যবহার করে বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে পণ্যভর্তি কনটেইনার! কাস্টমসের অজান্তে দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করে আসছে একটি অসাধু চক্র। আর এ চক্রের হোতাদের খুঁজে বের করতে এবার ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার ড. এ কে এম নুরুজ্জামান জয়নিউজকে বলেন, ২৯৫টি পণ্যভর্তি কনটেইনারের হদিস বের করতে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি গত ৫ বছরের চালান পর্যালোচনা করে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে পণ্য খালাসের বিষয়টি চিহ্নিত করবে। একইসঙ্গে দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকদের সনাক্ত করতেও কাজ করবেন কমিটির সদস্যরা।
তিনি বলেন, যে সমস্ত সিএন্ডএফ এজেন্টদের ইতিমধ্যে সনাক্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলার জন্য সুপারিশ করবে কমিটি। কমিটির সদস্যদের আগামী দশ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জয়েন্ট কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসানকে আহ্বায়ক ও সহকারী কমিশনার নুরুন নাহার লিলিকে সদস্য সচিব করে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে ডেপুটি কমিশনার বাবুল ইকবাল, ফাতেমা খায়রুন নূর, সহকারী প্রোগ্রামার মো. কামরুল হক ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নয়ন চন্দ্র রায়কে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে প্রতিটি আইজিএম ও বিএল দাখিল করার পরেও পণ্য খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি জানিয়ে ড. নুরুজ্জামান বলেন, এমন ৫ হাজার ৫৮৪টি পণ্য চালানের তালিকা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইতিপূর্বে অতিরিক্ত কমিশনার-২ এর সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব কর্মকর্তা ডি এ এম মহিবুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাস্টমস হাউসে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে বদলি করা হয়। বদলির আদেশে তাঁর পাসওয়ার্ড বাতিল করার জন্য অপারেশন ম্যানেজার, কাস্টম হাউসকে অনুরোধ করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বদলি হওয়ার পরও ২০১৮ সাল পর্যন্ত আইডিটি সচল ছিল। আইডিটি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ চালান খালাস নেওয়া হয়েছে তা খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে হদিস মেলেনি এমন ২৯৫টি পণ্য চালানের। ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বা পরবর্তী সময়ে ঐ কর্মকর্তার পাসওয়ার্ডটি কেন বাতিল করা হয়নি তাও খতিয়ে দেখবে কমিটি।
এছাড়া অপর কর্মকর্তা ফজলুল হকের আইডি ব্যবহার করে ৩ হাজার ৫০০টি পণ্য চালান খালাস করা হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর আইডি ব্যবহার করা হয়েছে।
কাস্টমস হাউসে দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে দাখিলকৃত প্রতিটি আইজিএম, বিএলের বিপরীতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে কমিটি। ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে বছরে কতটি চালানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তাও খতিয়ে দেখবেন কমিটির সদস্যরা।