দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক রুই জাতীয় মাছের প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে এবার মা মাছ বিপুল পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার (৩০ মে) সকাল পর্যন্ত চলে ডিম সংগ্রহের কার্যক্রম। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, স্থানীয় প্রায় ৫৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ২৫০টি নৌকা নিয়ে হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহে অংশ নেন। নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর, রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতার গোনা, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতালির বাক এবং অঙ্কুরিগোনা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে চলে এই সংগ্রহ অভিযান। এতে করে নদী পাড়জুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ।
তিনি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি যৌথভাবে ডিম সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ এবং পরিবেশ মনিটরিংয়ের কাজ করছে। এবার প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে জেলেরা। এর আগে ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি এবং ২০২৪ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পেরে জেলেরা ভীষণ আনন্দিত। বর্তমানে ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারি ও মাটির কুয়ায় ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত। বৃহস্পতিবার অমাবস্যার জো বা তিথীর (৪র্থ জো) শেষ দিনে বেলা ১১টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। প্রথম দিকে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিম পাওয়া যায়। পরে জোয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। যেহেতু অমাবস্যার জো চলছে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলেই রাতেই পুরোদমে ডিম ছাড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল। ঠিক হয়েছেও তাই।
হালদা গবেষকরা জানান, বছরের এপ্রিল থেকে জুনের যেকোনো সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এই সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয়, তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে।
গত কয়েকদিন ধরে হালদা পাড়ের জেলেরা ডিম সংগ্রহের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে জো চলাকালে তারা রাত-দিন নির্ঘুম থেকে ডিম ছাড়ার প্রহর গুনেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মা মাছ ডিম ছাড়েনি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মা মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়ে।
খাগড়াছড়ির জেলার বাটনাতলী পাহাড় থেকে নেমে সর্পিল ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হালদা নদী মিলেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এই নদীর সুরক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
জেএন/এমআর