চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিওথেরাপি মেশিনটি অচল রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেশিনটি অচল হয়ে আছে। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। নিরুপায় হয়ে অনেকে চিকিৎসাসেবা নিতে যাচ্ছেন ঢাকায়।
হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগের মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ায় গত বছর ১২ কোটি টাকা মূল্যে আমদানি করা হয় নতুন মেশিন। গত ৩১ অক্টোবর পরমাণু শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল মেশিনটির সোর্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। ৪ নভেম্বর সোর্স রেডিয়েশন নির্গমন সংক্রান্ত ‘বিপদমুক্ত’ সনদ দেয়। এরপরই মেশিনটি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ২০০২ সালে কোবাল্ট নামের একটি রেডিওথেরাপি মেশিন চালু করা হয়। যার মেয়াদ ছিল ১০ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নতুন মেশিনটি আসে। ১৩ নভেম্বর মেশিনটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২৬ ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যায় মেশিনটি। এরপর থেকে এটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
সূত্র জানায়, আগের মেশিনটি চালু থাকাকালে বছরে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো। তবে ক্যান্সারাক্রান্ত ব্যক্তির বড় একটি অংশ সেবার বাইরে থেকে যেত। কারণ রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। একটি মেশিনে সবাইকে সেবা দেওয়া সম্ভব হত না।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রেডিওথেরাপি সেবার কক্ষটি বন্ধ। এ অবস্থায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, মেশিন নষ্ট থাকায় সেবা পাচ্ছেন না তারা। ঢাকায় বা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার মতো টাকা তাদের নেই। এ অবস্থায় মেশিনটি চালু না হলে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে।
সন্দ্বীপ থেকে আসা ক্যান্সার রোগী রফিকুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, আমার এক আত্মীয় ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আমাকে এখানে আসতে বলল। কিন্তু এখানে এসে জানলাম মেশিনটি বন্ধ। এখন কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।
টেকনেশিয়ানরা জানান, মেশিনটিতে ক্যালিব্রেশনের (ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার রশ্মি) কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। তবে সেবা চালুর পর প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের মতো রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে রোগীরা সেবা পেয়েছেন। মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ায় রোগীরা কষ্ট পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ জয়নিউজকে বলেন, রেডিওথেরাপি যন্ত্র নষ্ট জেনে এখন অনেক রোগী এখানে আসছেন না। কেউ ঢাকায় চলে যাচ্ছেন, কেউবা চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, মেশিনটির কয়েকটি পার্টস ঠিকমতো কাজ করছে না। শীঘ্রই বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি টিম আসবে। আশা করি, এ মাসের মধ্যেই মেশিনটি সচল হয়ে যাবে। তারপর রোগীরা আবার সেবা নিতে পারবেন।