সন্তান হারানো পিতার আর্তনাদ, আমি গোনাহ করেছি সে তো নিষ্পাপ!

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুতে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই বছর বয়সী একমান্ত্র সন্তান আয়েশাকে হারিয়ে নিঃশেষ বাবা মিঠুর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।

- Advertisement -

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে অটোরিকশায় থাকা অবস্থায় ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারায় নিষ্পাপ শিশুটি।

- Advertisement -google news follower

বুকফাটা কষ্টে ভেঙে পড়া আয়েশার বাবা মিঠু বলেন, স্ত্রী জুবাইদা ফেরদৌস ইসরা ও একমাত্র সন্তান আয়েশাকে নিয়ে অটোরিকশায় ছিলেন সাজ্জাদ নূর মিঠু।

অটোরিকশাটি কালুরঘাট রেলসেতুতে উঠলে সেটি হঠাৎ আটকে যায়। আমাদের সামনে একটা টেম্পো ছিল। ঠিক তখনই দ্রুতগতিতে উঠে আসে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন। মুহূর্তেই ওলটপালট হয়ে যায় সবকিছু।

- Advertisement -islamibank

ট্রেনের চালক বারবার হর্ন দিচ্ছিলেন। লাইনম্যান ব্রিজের ওপর চলে আসে। টেম্পোটা ক্রস করে চলে গেলেও আমাদের অটোরিকশা আটকে যায়। আমি জানি না এটা কাদের গাফিলতি। তবে কর্তৃপক্ষ এজন্য দায়ী।

আমার একটাই দাবি, এই সেতুতে আমি আর ট্রেন চলতে দেব না। যদি চলে তবে আমি আমার জীবন দিয়ে দেব।

আমি অভিশাপ দিচ্ছি আল্লাহর গজব পড়বে। আমার ২ বছরের বাচ্চা। আমার ৩০ বছর বয়স, আমি গোনাহ করেছি কিন্তু সে (আয়েশা) তো নিষ্পাপ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার সময় সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঠিক তখনই কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুর দিকে এগিয়ে আসে।

নিয়ম অনুযায়ী, লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে ট্রেন সেতুতে ওঠার কথা থাকলেও চালক তা মানেননি। ফলে সেতুর ওপর থাকা অটোরিকশা, একটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

এতে শিশু আয়েশাসহ মোট তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আয়েশা বাদে নিহত আরেকজন হলেন মোহাম্মদ তুষার। এ ছাড়া আহত তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- আসিফ উদ্দিন বাপ্পি, আসমা আহমেদ ও আঞ্জু আরা।

বর্তমানে আহত পাঁচজনেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জালানিহাট স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ট্রেনটি রাত ১০টা ১০ মিনিটে এটি কালুরঘাট রেলসেতুর অদূরে পৌঁছায়। ওইসময় সেতুর ওপরে একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে যানজট তৈরি হয়।

আমরা তখনই লাল সিগন্যাল দিই। গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সিগন্যাল দেন। কিন্তু চালক সিগন্যাল মানেননি। কালুরঘাট ব্রিজটি ডেড স্টপেজ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেন থামিয়ে ধীরে ব্রিজে ওঠার নিয়ম। চালক তা মানেননি।

এদিকে এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার (৬ জুন) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে সেতুর ওপর ট্রেনের ধাক্কায় সংঘটিত দুর্ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে চার রেল কর্মীকে।

বরখাস্তকৃতরা হলেন পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা (হেড কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম), লোকো মাস্টার গোলাম রসুল (টি নং-৫৩০), সহকারী লোকো মাস্টার আমিন উল্লাহ (টি নং-৭২৩) এবং অস্থায়ী গেট কিপার (টিএলআর) মাহবুব।

দুর্ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম এর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ডিএমই ( লোকো), চট্টগ্রাম, ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার -১ এবং বিভাগীয় চিকিৎসক, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM