নানান জল্পনা-কল্পনার পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দীর্ঘ ১৭ বছরের অধ্যায় শেষ হলো।
এতদিন ধরে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের মেয়াদ গতকাল রবিবার রাত ১২টায় শেষ হয়ে যায়। চুক্তির মেয়াদও আর বাড়েনি।
শেষদিনের মতো টার্মিনালটি পরিচালনা শেষে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাইফ পাওয়ারটেক। অন্যদিকে রাত ১২টার পর এনসিটি পরিচালনা করতে যাচ্ছে সিডিডিএল।
আজ সোমবার (৭ জুলাই) থেকে আগামী ৬ মাসের জন্য এনসিটির দায়িত্ব নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)’র মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
জানা গেছে, টেকনিক্যাল কারণে নৌবাহিনী সরাসরি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারলেও, তারা ড্রাইডকের মাধ্যমে এনসিটির কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, রবিবার রাত ১২টায় এনসিটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের মেয়াদ শেষ।
এখন থেকে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেডের নতুন ব্যবস্থাপনায় এবং তাদের তত্ত্বাবধানে এনসিটি পরিচালনায় বর্তমানে নিয়োজিত কর্মীরা আগের মতোই কাজ করবেন।
এ বিষয়ে সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমীন বলেন, এনসিটির দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। তবে এনসিটি পরিচালনায় তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৩ হাজার ৮শ শ্রমিক বহাল থাকবে এবং তারা নৌবাহিনীকে শতভাগ সহযোগিতা করবে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অন্য টার্মিনাল সিসিটিতে তাদের কার্যক্রম চুক্তি অনুযায়ী চলমান থাকবে বলে জানান সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমীন।
এর আগে গত বুধবার (২ জুন) চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আগামী ছয় মাস বা প্রয়োজনে বেশি সময়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দেওয়া হচ্ছে। এতদিন ধরে বন্দরে কাজ করা কারও চাকরি যাবে না, যে যে পদে কাজ করছিলেন তাই করবেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০০৭ সাল থেকে আংশিক আর ২০১৫ সাল থেকে পুরোপুরি এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সাইফ পাওয়ার টেক। তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ জুলাই। চুক্তির মেয়াদ আর বাড়ছে না। নৌবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা সহায়তা করবে।
তবে আগে থেকেই চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) পরিচালনারও চুক্তি ছিল সাইফ পাওয়ার টেকের সাথে, তা অব্যাহত থাকবে।
এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল রয়েছে- চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)।
এর মধ্যে এনসিটি সবচেয়ে আধুনিক ও বৃহৎ। দৈর্ঘ্যে ৯৫০ মিটার বিশিষ্ট এই টার্মিনালে একসঙ্গে চারটি বড় কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যায়। রয়েছে বিশ্বমানের ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন।
চারটি কনটেইনার টার্মিনালের মধ্যে এনসিটি একাই ২০২৪–২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং হওয়া প্রায় ৩২ লাখ টিইইউস কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ পরিচালনা করেছে।
বার্ষিক সক্ষমতা ১১ লাখ টিইইউস হলেও ২০২৪ সালে এই টার্মিনালে ১২ লাখ ৮১ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। টার্মিনালটি প্রতিবছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে।
জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে আংশিক এবং ২০১৫ সাল থেকে পূর্ণমাত্রায় এনসিটি পরিচালনা করে আসছে সাইফ পাওয়ার টেক। একইভাবে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও পরিচালনা করছে সাইফ পাওয়ার টেক।
এ ছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) পরিচালনা করছে বন্দর নিজেই এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা করছে সৌদি আরব ভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটিই)।
২০২৪ সালের জুন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি পিসিটি পরিচালনা করছে। চুক্তি অনুযায়ী নিজস্ব সরঞ্জাম দিয়ে ২২ বছর পিসিটি পরিচালনা করবে সৌদি আরবের কোম্পানিটি।
জেএন/pr/এমআর