ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় পারস্পরিক লাভের জন্য একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার রাত ১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদিনের আলোচনায় বিশেষ করে গুরুত্ব পেয়েছে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন এদিন বেলা ১১টায় (ওয়াশিংটন ডিসি সময়) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং চলমান শুল্ক আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
এর বাইরে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
তিন দিনের আলোচনার দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় আলোচনা পুনরায় শুরু হয় এবং শুক্রবারও এ আলোচনা চলবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। ঢাকায় থেকে ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউএসটিআর, কৃষি, শ্রম, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থ, উদ্ভাবন ও মেধাস্বত্ব এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
দেশি শিল্পকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে।
বিশ্বজুড়ে নতুন এক বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত করে মিত্র-শত্রু নির্বিচারে তার এ ব্যাপক শুল্কারোপ পরিচিতি পায় ট্রাম্প শুল্ক হিসেবে।
সেই শুল্কারোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে পরে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা উঠিয়ে দরকষাকষিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এই সময়ে।
তবে ৯ জুলাই আসার দুদিন আগেই বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে চিঠি দিয়ে নতুন হারে শুল্কারোপের কথা বলেন ট্রাম্প। শেষ সময়ে চুক্তি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েও কাজ হয়নি।
সবার উদ্দেশ্যে একইভাষায় লেখা চিঠিতে বলা হয়, তার নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ অগাস্ট থেকে।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো চিঠিতে সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করলেও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনার দুয়ার খোলা রাখার কথা বলেছেন।
যেসব দেশ আরও ছাড় দিতে রাজি, তাদের প্রতি সদয় হবেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা সমন্বয় করা যেতে পারে… আমরা অবিচার করব না।”
প্রথম দফার আলোচনায় সুবিধা করতে না পেরে এবার নড়েচড়ে বসেছে সরকার। নতুন করে আবার আলোচনা শুরু করেছে।
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।
এতে চাপে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। একক দেশ হিসেবে পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।
জেএন/পিআর