নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর ৪টি কারণ জানাল তদন্ত কমিটি,সুপারিশ ৬

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম নগরীতে বর্ষা মৌসুমে খাল-নালায় পড়ে কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গত বুধবার দুপুরে নগরের হালিশহর এলাকার আনন্দপুরি এলাকার জামে মসজিদ সংলগ্ন গলির মুখে নালায় পড়ে হুমায়রা (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

- Advertisement -

শিশুটি ওই এলাকার নিয়াজ খানের মালিকানাধীন পাঁচতলা একটি ভবনের নিচতলার সাবরিনা অ্যাপারেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আসমা বেগমের মেয়ে।

- Advertisement -google news follower

অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

শিশুটির মৃত্যুর একদিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ দুর্ঘটনার জন্য চারটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরে প্রতিকারের জন্য ছয়টি সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

- Advertisement -islamibank

কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে সম্ভাব্য যে ৪টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো-শিশুটির মায়ের কর্মস্থলে কর্মীদের শিশু সন্তানদের রাখার কোনো ব্যবস্থা না থাকা, পরিবারের দায়িত্বহীনতা, ভবনের মূল ফটক খোলা থাকা এবং সড়কের অবস্থান ও উচ্চতার তারতম্য।

তবে ওই নালার ওপর স্ল্যাব না থাকা কিংবা বেষ্টনী না থাকার জন্য কারও দায় রয়েছে কি না সেই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি প্রতিবেদনে।

তাছাড়া ভবিষ্যতে এই ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যে ছয়টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে প্রথমত রয়েছে কর্মস্থলে কর্মীদের শিশুদের নিরাপত্তা ও নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা।

দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়, ভৌগলিকভাবে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা বিভিন্ন রকম হওয়ায় ও নগরায়ন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার সময় নগরবাসী তাদের চলাচলে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অধিক মনোযোগী ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

অন্য সুপারিশগুলো হলো- জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার আয়তনের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ সিস্টেমের ব্যবস্থা করা, ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের অনুমোদিত নীতিমালা মেনে চলা, ড্রেনেজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা সংরক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ নালার উপর স্ল্যাব স্থাপন করা, ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়ক ও ড্রেনেজের জন্য মালিকপক্ষকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আবাসিক এলাকায় কারখানা পরিচালনায় আইনগত বিধান নিশ্চিত করা এবং নগরবাসীর সচেতনতার জন্য প্রচারণার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আবাসিক এলাকায় এরকম কারখানা থাকা উচিত না। তাছাড়া কর্মীদের শিশু সন্তানদের রাখার মত কোন ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। শিশুদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার সময় বাচ্চাটি একা ছিল। বাইরে যখন ভারি বর্ষণ এবং রাস্তায় পানি জমে গেছে তখন শিশুটিকে এভাবে একা বাইরে রাখা ঠিক হয়নি। এতে মায়ের গাফিলতি ছিল।

ওই ভবনের ভিতরে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ফুটবল নিয়ে খেলার সময় বলটি পানিতে পড়ে গেলে সেটি তুলতে গিয়ে ভবন লাগোয়া মসজিদ গলির মুখের ছোট নালায় পড়ে যায় হুমাইরা।

ওই ছোট নালাটি ভবনের সামনের মূল সড়কের বড় নালার সঙ্গে যুক্ত। নালায় পড়ার পরপরই কয়েকজন ছুটে এলেও পানির টানে শিশুটি বড় নালায় চলে যাওয়ায় তাকে উদ্ধার করতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তিন বছরের একটি ছোট শিশু একা একা এই ধরণের প্রবল বর্ষণের সময় বাইরে অবস্থান করা এবং খেলাধুলা করার ক্ষেত্রে পরিবারের উচিত ছিল তার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। শিশুটি নালায় পতিত হয়ে মৃত্যুর পিছনে এটি একটি অন্যতম কারণ।

তাছাড়া ওই ভবনে কোনো নিরাপত্তা রক্ষীও নেই। একজন কেয়ারটেকার আছে, সে মূল ফটক খোলা রেখেছিল। যদি মূল ফটক বন্ধ থাকত তাহলে শিশুটি বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেত না এবং এরকম দুর্ঘটনাও ঘটত না।

সবশেষ এ ঘটনার পর জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বৃহস্পতিবার থেকেই মাইকিং করা শুরু হয়েছে জানালেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, গত ৬ বছরে চট্টগ্রাম নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫, ২০২৩ সালে ৩, ২০২৪ সালে ৩ ও চলতি বছর ২ জন।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কাপাসগোলার হিজড়া খালে তলিয়ে যায় সে শিশু সেহরিশ। পরেরদিন সকাল ১০টার দিকে নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর নগরের চাক্তাই খাল থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM