প্রতিপক্ষকে গোলে ভাসিয়ে একের পর এক ম্যাচ জিতছে টাইগ্রেসরা

খেলাধুলা ডেস্ক :

আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রাখার পর শুরুর দিকে যে নারী দল গোলের পর গোল খেত, তারাই এখন একের পর এক ম্যাচ জিতছে প্রতিপক্ষকে গোলে ভাসিয়ে।

- Advertisement -

২০ বছর আগে ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ বাছাইপর্বে মেয়েরা প্রথম পা রেখেই গুয়ামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে নারী ফুটবলে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের, তা ছিল কাঁটায় ভরা পথ।

- Advertisement -google news follower

একই টুর্নামেন্টে ২৪ গোল হজম করেছিলেন লাল–সবুজের মেয়েরা। হংকংয়ের কাছেও হারে খুব বাজে ভাবে।

তখনই টাইগ্রেসরা টের পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের নির্মম বাস্তবতা। আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা সেই দুঃস্মৃতি মুছে দিয়েছেন। দুই দশক পর সেই বীজ থেকে ফলছে সাফল্যের ফল। বাংলাদেশের সামনে গোলবন্যায় ভাসছে প্রতিপক্ষ।

- Advertisement -islamibank

যে নারী ফুটবল একসময় ছিল নড়বড়ে, আজ তারা লিখে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের মেয়েরা আজ শুধু খেলছেন না, অনেক ম্যাচেই তাঁরা প্রতিপক্ষকে গোলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

সর্বশেষ উদাহরণ ঢাকায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারোনায় গতকাল শুরু হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ ৯-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে শ্রীলঙ্কাকে।

বাংলাদেশ এই গোল-উৎসব করল প্রথমবারের মতো জাতীয় দল এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের ছাড়পত্র পাওয়ার আনন্দের রেশ থাকতে থাকতেই।

মিয়ানমারে গত ৫ জুন শেষ হওয়া এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ৩ ম্যাচে করেছে ১৬ গোল, খেয়েছে মাত্র একটি।

গোলের এই ধারাবাহিকতা হঠাৎ পাওয়া নয়। বাংলাদেশ এর আগেও বেশ কিছু ম্যাচে প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের যেকোনো স্তরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ১৭-০ গোলে।

২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভুটানের থিম্পুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের মেয়েদের রীতিমতো ফুটবল শেখান বাংলাদেশের মেয়েরা।

স্ট্রাইকার সিরাজ জাহান স্বপ্নার ৬ গোল, মার্জিয়ার ৪ গোলে পাকিস্তান ছত্রখান হয়ে যায়। সঙ্গে শিউলি আজিম, মৌসুমী, আঁখি, কৃষ্ণা ও তহুরার নামও জ্বলজ্বল করছিল স্কোরলাইনে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ১৬-০ গোলে। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল নেপালের মাঠে ভুটানকে হারিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

সেই প্রতিযোগিতায় ভারত ১৩ গোল দিয়েছিল ভুটানকে, গ্রুপসেরা হতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৪ গোলের ব্যবধানে জয়। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশের মেয়েরা করেছিলেন ১৬ গোল। সানজিদা ও মারিয়া করেন ৪টি করে, মৌসুমীর গোল ৩টি।

১৬ গোলের পর ১৪ গোলের কীর্তি আছে একটি। ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট থিম্পুতে বাংলাদেশের মেয়েরা পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেন ১৪-০ গোলে। সেটি ছিল অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে। পাকিস্তান সেবার প্রথমবার অংশ নেয় অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে শামসুন্নাহার জুনিয়র করেন ৪ গোল।

ঢাকায় ২০২১ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কাকে ১২-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। আজকের জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার সেদিন হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ঋতুপর্ণা ও আনুচিং মগিনির পা থেকে আসে জোড়া গোল।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের গোল–উৎসবের ম্যাচ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে আরও। ২০১৯ সালে মিয়ানমারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ফিলিপাইনকে ১০-০ গোলে হারানোর কীর্তি আছে বাংলাদেশের মেয়েদের।

২০১৮ সালে বাহরাইনকে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ১০-০, কিরগিজস্তানকে একই টুর্নামেন্টে ১০-০, একই বছর হংকংয়ের জকি কাপে (অনূর্ধ্ব-১৫) মালয়েশিয়াকে ১০-১ উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।

৯ গোলের জয়ও আছে কয়েকটি। তাজিকিস্তানে ২০১৬ সালের ২৮ ও ৩০ এপ্রিল নেপাল ও তাজিকিস্তানকে ৯-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই দুটি বড় জয় ছিল পরপর দুই ম্যাচে। নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন মার্জিয়া ও আনুচিং। তহুরা করেন জোড়া গোল। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন তহুরা। সেদিন হ্যাটট্রিক করেছেন আজকের জাতীয় দলের তারকা মনিকা চাকমাও। আনুচিং জোড়া গোল এবং আঁখি পেনাল্টিতে এনে দিয়েছেন অন্য গোলটি।

জাতীয় দল আন্তর্জাতিক অভিষেকের বছরেই (২০১০) কক্সবাজারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে ৯-০ গোলে হারায়। আছে আট গোলের বিশাল জয়ও।

২০২২ সালে প্রথমবার সাফ জয়ের পথে সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০, গত বছর সাফের সেমিফাইনালে সেই ভুটানকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করাও বড় জয়ের তালিকায় থাকছে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে গত ২৯ জুন বাহরাইনকে ৭-০, ৫ জুন তুর্কমেনিস্তানকে ৭-১–এ হারানোরও গর্বও আছে।

বয়সভিত্তিক ও জাতীয় পর্যায়ে ৬ গোলে জয়ও উঠে আসছে তালিকায়। ২০১৪ সালে জাতীয় দল আফগানিস্তানকে ৬-১, ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে আফগানদের ৬-০, ২০১৭ সালে মালদ্বীপকে ৬-০ গোলে হারানোর ইতিহাস রয়েছে জাতীয় দলের।

প্রতিটি জয় শুধু পরিসংখ্যান নয়, আত্মবিশ্বাস আর উদ্দীপনার নতুন নাম বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে। তবে সবটাই যে বড় বড় জয়ের গল্প, তা নয়, আছে বড় হারও।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে থাইল্যান্ডে ৯-০ গোলে হার জাপানের কাছে। তার আগের বছর অনূর্ধ্ব-১৯ এএফসি বাছাইয়ে তাজিকিস্তানে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৭-০ গোলে হার।

একই টুর্নামেন্টে ভারতের কাছে ১০-০ গোলে উড়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। ২০১৭ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে থাইল্যান্ডে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে হার ৯-০ গোলে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM