নিম্নচাপের প্রভাব ও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার সব উপজেলায় গতকাল রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত আজ সোমবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
কখনো থেমে থেমে, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে সাগরের প্রবল জোয়ারে কর্ণফুলী ও হালদা নদী উপচে পড়ে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু নিচু এলাকা ও সড়ক।
বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির ঢলে কিছু কিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী মানুষজনকে। গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টা চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া আমবাগান আবহাওয়া কেন্দ্রে একই সময়ে রেকর্ড করা হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি।
আজ সোমবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে গিয়ে দেখা যায়. টানা বৃস্টিপাতের ফলে নগরের কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, চান্দগাঁও, প্রবর্তক মোড়, তিনপোলের মাথা, জুবিলি রোড, রেয়াজুদ্দিন বাজার, পাঁচলাইশ মোড়, আতুরার ডিপো, বিবিরহাট, ওয়াসা, জিইসি মোড়, হালিশহর ও আগ্রাবাদসহ বেশ কয়েকটি সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এসব সড়ক ডুবে যাওয়ায় রিকশা, অটোরিকশা, টেম্প্যু, বাসসহ আরও বিভিন্ন গণপরিবহণ একেবারে কম দেখা যায়। এতে সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসের সকালে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়।
গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে বাড়তি ভাড়ায় রিকশা-অটোরিকশা নিয়ে কর্মস্থলে যান। এছাড়া স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
আগ্রাবাদের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি নগরীর জিইসি মোড়ে অবস্তিত একটি কেবসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অন্যান্য দিনের মতোই সকালে অফিসের উদ্দ্যেশে বাসা থেকে বের হয়ে পড়েছেন বিপাকে।
তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গণপরিবহণের সংখ্যা কম, সে তুলনায় সড়কে যাত্রী বেশি। সকালে অফিসের দেরি হওয়ায় অটোরিকশা নিয়েছি। চালক বৃষ্টির অজুহাতে ১২০ টাকার ভাড়া ১৬০ টাকা নিয়েছে।
নগরের কাতালগঞ্জ এলাকার গৃহিনী শাকিলা ফারজানা মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার উদ্দ্যেশে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে বাওয়া স্কুলে পড়ে। সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি মানেই আমাদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। আমার বাসা থেকে প্রতিদিন ৫০/৬০ টাকা খরচে স্কুলে যেতে পারলেও আজ ভাড়া গুনতে হয়েছে প্রায় ২০০ টাকা। বৃষ্টি পড়লেই চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন অভিযোগ তার।
এদিকে বৃষ্টিপাতের সময় সাগরের প্রবল জোয়ারের চাপে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে খাল দিয়ে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকা ও সড়ক ডুবে যায় বলে জানান নগরবাসীরা।
চট্টগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদীর পানি একেবারে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। গতকাল রবিবার বিকেল তিনটায় নগরীর কালুরঘাট এলাকার কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬৫ মিলিমিটার।
সেখানে ৪ দশমিক ১৫ মিলিমিটার জোয়ারের উচ্চতাকে বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়। এ হিসেবে পানি বিপদসীমার মাত্র আধা মিলিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় বিকেল ৩টায় হালদা নদীর পানি ৪ দশমিক ৭৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ৪২ মিলিমিটার। এ হিসেবে পানি এখনও বিপদসীমা থেকে ৪ মিলিমিটার নিচে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনিস হায়দার খান বলেন, কর্ণফুলী নদীর পানি জোয়ারের সময় একেবারে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
হালদা নদীর পানি এখনও স্বাভাবিক আছে। জোয়ারের সময় কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে ভাটার সময় আবার পানি নেমে যাচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল হাসান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গত শনিবার উপকূল অতিক্রম করেছে। তবে এখনো তার প্রভাব রয়েছে।
এ ছাড়া মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সারা দিন বৃষ্টি থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমে আসবে।
জেএন/পিআর