ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বহু আলোচনার পরও এখনও চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট বার্তা দিলেন— ভারতের উপর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হতে পারে।
এই মন্তব্যের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ১ অগাস্ট ছিল শেষ সময়সীমা, যা পেরিয়ে গেলেও এখনও চুক্তির কোনও স্থায়ী রূপরেখা তৈরি হয়নি।
ট্রাম্প বলেন, “ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, কিন্তু সব দেশের তুলনায় তারাই সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে। এটা আর চলতে পারে না।”
তিনি আরও জানান, ভারতের পণ্যের উপর বেশি হারে আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। যদিও এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
২৫ আগস্ট ভারতে আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল
চুক্তি সম্পন্ন করতে আমেরিকার পক্ষ থেকে আগামী ২৫ আগস্ট ভারতে আসছে এক প্রতিনিধি দল। এর আগে ওয়াশিংটনে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, “চুক্তি প্রায় হয়ে গিয়েছে।” কিন্তু বাস্তবে এখনও কোনও লিখিত বা আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি।
কোন বিষয়ে আটকে আলোচনা?
সূত্র অনুযায়ী, বাণিজ্য চুক্তির বেশ কিছু মূল বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। আমেরিকার তরফে চাওয়া হয়েছে কৃষিপণ্য, ইলেকট্রনিকস, এবং মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির উপর ভারত যেন শুল্ক কমায়। অন্যদিকে ভারত চাইছে বিশ্ববাজারে রফতানির ক্ষেত্রে বেশি ছাড় এবং আমেরিকান ভিসা নীতিতে নমনীয়তা।
ভারতের অবস্থান: স্বার্থে চুক্তি নয়, শর্তে নয়
ভারতের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল স্পষ্ট বলেছেন,“ভারতের স্বার্থই আমাদের কাছে প্রধান। কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বা চাপ আমাদের গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এমন একটি চুক্তি চাই, যাতে উভয় পক্ষের সমান লাভ হয়—একেবারে উইন-উইন পরিস্থিতি।”
শুল্কের হুমকিতে চাপে ভারত?
যদিও ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বিশ্বের ২২টি দেশের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভারত এখনও পর্যন্ত সেই তালিকায় না থাকলেও, হুমকির বার্তা ভারতকে কূটনৈতিকভাবে চাপে ফেলেছে। ভারতীয় কূটনৈতিক মহলের আশা, শেষ পর্যন্ত চাপ নয়, আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন হবে।
একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক বলেছেন,“আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। আমেরিকাও বুঝবে ভারতের অবস্থান।”
শুল্ক আরোপ হলে কী প্রভাব পড়বে?
যদি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপানো হয়, তা হলে ভারতীয় রফতানিকারীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য ও স্টিল শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এছাড়া, উচ্চমূল্যের কারণে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা কমে যেতে পারে, যার ফলে রফতানি হ্রাস পাবে।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হলেও এখনও কোনও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। শুল্ক আরোপের হুমকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তবে দুই দেশের মধ্যেই আলোচনার ইচ্ছা স্পষ্ট। এখন দেখার, আগামী দিনে দুই পক্ষ কতোটা নমনীয়তা দেখাতে পারে নিজেদের অবস্থানে। সূত্র-নজরবন্দি