তেজস্ক্রিয় সন্দেহের ১৩ কনটেইনার নিয়ে বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস হাউজ একসঙ্গে এক বিরল এবং জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে—কারণ, বন্দরের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে তেজস্ক্রিয় পদার্থ সন্দেহে শনাক্ত হওয়া মোট ১৩টি কনটেইনার।

- Advertisement -

এ কনটেইনারগুলোতে রয়েছে লোহার স্ক্র্যাপ, সিরামিকের কাঁচামাল ও জিংক ওয়েস্টসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল।

- Advertisement -google news follower

তবে এগুলোকে আইনি জটিলতার কারণে রফতানিকারক দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না, আবার দেশের ভেতরে নিরাপদে অপসারণ বা নিষ্পত্তিরও উদ্যোগ দ্রুত এগোচ্ছে না।

বন্দরে মার্কিন অর্থায়নে চালু হওয়া ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের বিশেষায়িত গেট দিয়ে প্রবেশের সময় এসব কনটেইনার শনাক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট ব্রাজিল থেকে আসা এক কনটেইনারে ২.১৬ মাত্রার সিজিয়াম-১৩৭ (Cs-137) ও থোরিয়াম-২৩২ (Th-232) পাওয়া যায়—যা তেজস্ক্রিয়তার একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

- Advertisement -islamibank

পরমাণু শক্তি কমিশনের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে বন্দরে অন্তত ১৩টি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়েছে।

এর মধ্যে কিছু কনটেইনারের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা সহনীয় হলেও, যেগুলোর মাত্রা ২.৩ বা তার বেশি, সেগুলো আটকে রাখা হয়। বর্তমানে এই কনটেইনারগুলো বন্দরের মেগাপোর্ট প্রকল্প এলাকার একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে রাখা আছে।

পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক ড. শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে কোনো সমঝোতা চুক্তি নেই। ফলে কে এই বিপজ্জনক পণ্যের দায়িত্ব নেবে, তা নির্ধারণে গড়িমসি চলছে।

এদিকে, তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকা কনটেইনারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে এসব কনটেইনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কাছে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, এসব কনটেইনার দ্রুত নিষ্পত্তি জরুরি। কারণ সেগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ধরনের পণ্য দ্রুত সরিয়ে ফেলতে কাস্টমসকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অন্য পণ্যের সঙ্গে আসা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ফেরত পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না। এছাড়া পরমাণু শক্তি কমিশনের সঙ্গে বন্দর বা কাস্টমসের চুক্তি না থাকায় এসব পদার্থ অপসারণে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র নিয়ে পণ্যবোঝাই এসব কনটেইনার নিলামে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান বলেন, কাস্টমস আইন অনুযায়ী এসব পণ্য দ্রুত নিলামে তোলা হবে। তবে পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না।

শুধু আমদানি পণ্যের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় পদার্থ এসেছে এমনটা নয়। জাহাজ কাটা শিল্পের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মধ্যেও পরমাণু শক্তি কমিশনের পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়েছে। অন্তত তিন ধাপে পরীক্ষা শেষে এসব পদার্থ ঢাকার সাভারে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবস্থাপনা কেন্দে সংরক্ষণ করা হয়।

শুধু তাই নয়, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে থাকা ৩৫৭ কনটেইনারে সালফিউরিক অ্যাসিড, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থও রয়েছে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ